চট্টগ্রাম নগরের কালুরঘাট এলাকার এক ওষুধের দোকানি মো. রিদুয়ানকে ফোন করে খুনের হুমকি দিয়েছেন ১৩ মামলার আসামি মোহাম্মদ রায়হান। ‘আমি ঢাকাইয়া আকবর খুনের মামলার ২ নম্বর আসামি রায়হান, মাথার খুলি উড়ায় ফেলব’—এমন ভয়াবহ ভাষায় দেওয়া ওই হুমকির পর আতঙ্কে দিন কাটছে ব্যবসায়ীর। গত ২৫ জুলাই মোবাইল ফোনে পাঁচ মিনিট ৩৯ সেকেন্ড কথোপকথনের সময় রায়হান দোকানিকে গালাগাল করে বলেন, তাঁর অনুসারীদের মারধরকারী লোকজনকে হাজির না করলে খুন করে ফেলবেন।
রায়হান বর্তমানে পলাতক। তিনি কারাগারে থাকা আলোচিত ‘সন্ত্রাসী’ ছোট সাজ্জাদের ঘনিষ্ঠ এবং বিদেশে পালিয়ে থাকা সাজ্জাদ আলী ওরফে বড় সাজ্জাদের অনুসারী। সাজ্জাদ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, খুন, সন্ত্রাসসহ অন্তত ৩০টির বেশি অভিযোগ রয়েছে।
হুমকির ঘটনা ঘটার আগের রাতে কালুরঘাটে দোকানটির সামনে কিছু লোকের মারামারি হয়। রায়হান অভিযোগ করেন, দোকানি লোক ডেকে তাঁর অনুসারীদের মারধর করিয়েছেন। তবে দোকানির দাবি, তাঁর সঙ্গে ঝগড়ার সময় বাইরের কৌতূহলী জনতা এগিয়ে আসায় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। তিনি মারধরের সঙ্গে জড়িত কাউকে চেনেন না।
রায়হান নিজেকে পরিচয় দেন ঢাকাইয়া আকবর খুনের মামলার আসামি হিসেবে। গত ২৩ মে পতেঙ্গা সি-বিচে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় আকবর আলীকে। মৃত্যুর আগে আকবর জানান, গুলি করেছিলেন রায়হান।
চান্দগাঁও থানার ওসি আফতাব উদ্দিন বলেন, হুমকিদাতা রায়হান একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তাঁকে ধরতে অভিযান চলছে। একই সঙ্গে মোহরায় চাঁদার জন্য এক ব্যবসায়ীকে গুলি করায় সাজ্জাদ-রায়হানের অনুসারীদের দায়ী করা হয়েছে।
রায়হানের বিরুদ্ধে গত বছরের আগস্ট থেকে জোড়া খুন, পরিকল্পিত হত্যা, অস্ত্রসহ ১৩টি মামলা হয়েছে, যার মধ্যে ছয়টি হত্যা মামলা। রাউজান, অক্সিজেন, চান্দগাঁও ও বাকলিয়াসহ নগরের বিভিন্ন এলাকায় তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। গত ১৩ জুলাই বোরকা পরে যুবদল নেতা মোহাম্মদ সেলিমকে গুলি করে পালানোর একটি ভিডিও ভাইরাল হয়, সেখানে রায়হানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলেও জানায় পুলিশ।
হত্যাচেষ্টার একটি মামলায় কারাগারে গিয়ে ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে রায়হানের পরিচয় হয়। জামিনে বেরিয়ে দুজন মিলে চট্টগ্রামের একাধিক এলাকায় অপরাধের বিস্তার ঘটান। বর্তমানে সাজ্জাদ কারাগারে থাকলেও বাহিনীর দায়িত্ব সামলাচ্ছেন রায়হান।
ব্যবসায়ী রিদুয়ান এখনো থানায় সাধারণ ডায়েরি করেননি, তবে পুলিশ বলছে, ঘটনাটি তাদের জানা আছে। রায়হানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
চট্টগ্রামে গড়ে ওঠা সাজ্জাদ বাহিনীর সন্ত্রাসী তৎপরতা দমনে পুলিশ জোর তৎপরতা চালালেও, একের পর এক ঘটনায় এলাকাবাসী চরম আতঙ্কে রয়েছেন।
Leave a comment