আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ২৫০ ছাড়িয়েছে, আহত হয়েছেন অন্তত ৫০০ জন। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, কারণ দুর্গম এলাকায় এখনও উদ্ধারকাজ পৌঁছায়নি।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (USGS) জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৬ এবং এর গভীরতা মাত্র ৮ কিলোমিটার। কম গভীরতার কারণে কম্পনটি ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে। রোববার (৩১ আগস্ট) স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে রাজধানী কাবুল থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে জালালাবাদ অঞ্চলে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। এর পরপরই ৪.৫ থেকে ৫.২ মাত্রার দুটি আফটারশক অনুভূত হয়, যা আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দেয়।
দেশটির তথ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, কুনার প্রদেশের নুর গাল, সাওকি, ওয়াতপুর, মানোগি ও চাপা দারা জেলায় সবচেয়ে বেশি হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। অনেক গ্রামীণ এলাকা পাহাড়ি ও দুর্গম হওয়ায় সেখানে পৌঁছাতে সময় লাগছে। স্থানীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ সীমিত থাকায় সঠিক চিত্র এখনও জানা যায়নি।
অফিসিয়াল সূত্রে আরও জানা গেছে, সাওকি জেলার দেবা গুল এবং নুর গাল জেলার মাজার দারা এলাকায় ভূমিধসের কারণে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে উদ্ধারকারী দলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে দ্রুত পৌঁছাতে পারছে না।
আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তী সরকারের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ লিখেছেন, “উদ্ধার কার্যক্রমে স্থানীয় প্রশাসন ও জনগণ একসঙ্গে কাজ করছে। কেন্দ্রীয় সরকার ও আশপাশের প্রদেশ থেকেও সহায়তা দল পাঠানো হচ্ছে। মানুষের জীবন রক্ষায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে দুর্বল অবকাঠামো, চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা উদ্ধার কার্যক্রমকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। অনেক স্থানে বাসিন্দারা নিজ হাতে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে জীবিতদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন।
মানবিক সংস্থা ও বিভিন্ন দেশ ইতোমধ্যেই এই ভয়াবহ ঘটনায় গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছে। বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা আফগানিস্তানের জন্য জরুরি সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে খাদ্য, চিকিৎসা ও আশ্রয়ের তীব্র চাহিদা তৈরি হয়েছে ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আফগানিস্তান ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ হওয়ায় ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় টেকসই অবকাঠামো নির্মাণ ও জরুরি সাড়া দেওয়ার সক্ষমতা গড়ে তোলা অপরিহার্য। বর্তমানে দেশটির অর্থনৈতিক সংকট ও সীমিত রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা কার্যকর উদ্ধার ও পুনর্বাসনকাজকে আরও কঠিন করে তুলছে।
এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ আবারও প্রমাণ করেছে যে, আফগানিস্তানের মতো দেশগুলোতে কার্যকর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাঠামো কতটা জরুরি। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে স্থায়ী সমাধান না আনলে ভবিষ্যতেও এ ধরনের বিপর্যয় ভয়াবহ মানবিক সংকটে রূপ নেবে।
Leave a comment