আফগানিস্তানে আবারও কঠোর নিষেধাজ্ঞার পথে এগোলো তালেবান সরকার। এবার পুরো দেশজুড়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট পর্যবেক্ষণ সংস্থা নেটব্লকস জানিয়েছে, দেশটি বর্তমানে কার্যত একটি সম্পূর্ণ “ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট”-এর মধ্যে রয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেল থেকে ধাপে ধাপে ফাইবার-অপটিক সংযোগ বন্ধ করা হয়, যার প্রভাব পড়েছে মোবাইল নেটওয়ার্ক, স্যাটেলাইট টিভি ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের কার্যক্রমে। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৫টার দিকে কাবুলসহ সারা দেশে হঠাৎ ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে জনজীবনে এক ধরনের অচলাবস্থা তৈরি হয়।
ব্যাংকিং, ব্যবসা-বাণিজ্য, গণমাধ্যম এবং এমনকি বিমান চলাচল পর্যন্ত এর প্রভাব থেকে রক্ষা পায়নি। ফ্লাইটরাডার২৪ জানিয়েছে, সংযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে অন্তত আটটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে।
তালেবান সরকার দাবি করছে, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে “অশ্লীলতা রোধের” অংশ হিসেবে। তবে বিশ্লেষকরা একে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও তথ্যপ্রবাহ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করার রাজনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।
সাবেক টিভি সম্পাদক হামিদ হায়দারি বলেন, “আফগানিস্তান এখন উত্তর কোরিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে।” সাবেক সংসদ সদস্য মরিয়ম সোলাইমানখিল সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “আফগানিস্তান থেকে এখন আর কোনো কণ্ঠ অনলাইনে শোনা যাচ্ছে না। এই নীরবতা ভয়াবহ।”
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম টোলো নিউজ জানিয়েছে, টেলিভিশন ও রেডিও সম্প্রচারেও বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ব্যবসায়ীরা সতর্ক করেছেন, দীর্ঘ সময় ইন্টারনেট বন্ধ থাকলে আর্থিক ক্ষতির মাত্রা বিপর্যয়কর হতে পারে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পুরো অর্থনীতিতে গভীর সংকট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এটি তালেবান সরকারের সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞা। এর আগে তারা নারীদের উচ্চশিক্ষায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ, পাঠ্যসূচি থেকে নারী লেখকের বই বাদ দেওয়া, এবং ধাত্রীবিদ্যা কোর্স বাতিলসহ একাধিক দমনমূলক পদক্ষেপ নিয়েছিল। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইন্টারনেট বন্ধ করে এবার তারা পুরো দেশকে এক ধরনের তথ্য-কারাগারে পরিণত করেছে।
তালেবানের এই পদক্ষেপ আফগানিস্তানকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। দেশের ভেতরে নেমে এসেছে অচলাবস্থা ও নিঃসঙ্গতা, আর বাইরের পৃথিবীতে পৌঁছাচ্ছে না আফগানদের কণ্ঠস্বর।
Leave a comment