অনলাইনভিত্তিক পর্নোগ্রাফি কনটেন্ট তৈরি ও প্রচারের অভিযোগে আলোচিত এক বাংলাদেশি যুগলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সোমবার (২০ অক্টোবর) বান্দরবান থেকে তাদের গ্রেপ্তারের পর সিআইডির এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়।
সিআইডির তদন্তে জানা গেছে, নিজেদের ‘মডেল’ পরিচয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচিত এই যুগল মূলত আন্তর্জাতিক পর্ন সাইটে নিয়মিত ভিডিও প্রকাশ করতেন। বাংলাদেশের ভেতর থেকেই এসব কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছিল বলে নিশ্চিত করেছে সংস্থাটি।
গবেষণামূলক সংস্থা দ্য ডিসেন্ট-এর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ২০২৪ সালের মে মাস থেকে তারা প্রাপ্তবয়স্ক কনটেন্ট তৈরি ও অনলাইনে প্রকাশ শুরু করেন। এক বছরের মধ্যেই শতাধিক ভিডিও প্রকাশ করে তারা বিপুলসংখ্যক দর্শক ও অনুসারী অর্জন করেন।
তাদের কর্মকাণ্ড শুধু একটি সাইটেই সীমাবদ্ধ ছিল না। ইউরোপ ও আমেরিকার একাধিক জনপ্রিয় প্রাপ্তবয়স্ক ওয়েবসাইট ছাড়াও টেলিগ্রাম, ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করে নিয়মিত কনটেন্ট প্রচার করা হতো। টেলিগ্রামে তাদের পরিচালিত চ্যানেলে কয়েক হাজার সদস্য ছিল, যেখানে নিয়মিত ভিডিওর লিংক ও আয়ের তথ্য শেয়ার করা হতো। সিআইডি বলছে, এসব চ্যানেল থেকে তারা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতেন।
তদন্তে আরও জানা গেছে, ওই যুগল তরুণ-তরুণীদের অর্থ উপার্জনের লোভ দেখিয়ে এই পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে যুক্ত করার চেষ্টা চালাত। তাদের কিছু পোস্টে , “নতুন কনটেন্ট ক্রিয়েটর সংগ্রহ করুন, ইনসেনটিভ পান”— এমন বার্তা ব্যবহার করা হতো।
এ বিষয়ে সিআইডির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, “তারা মূলত প্রাপ্তবয়স্ক কনটেন্টকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করছিল। দেশে অবস্থান করেই আন্তর্জাতিক সাইটে কনটেন্ট প্রকাশ করা আইনত অপরাধ। ”
সিআইডি জানিয়েছে, অভিযুক্তদের ডিজিটাল ডিভাইস জব্দ করা হয়েছে এবং সেগুলো ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক বিশ্লেষণে শতাধিক ভিডিও, কনটেন্ট আপলোডের সময়সূচি এবং বিদেশি ওয়েবসাইটের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের প্রমাণ মিলেছে।
সংস্থাটি আরও জানায়, তারা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম ও ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ভিডিও সংরক্ষণ করতেন। তদন্তে দেখা গেছে,কনটেন্টগুলো পেশাদারভাবে শুট করা এবং সম্পাদনা করা হতো, যা থেকে বোঝা যায় এটি একটি পরিকল্পিত ও সংগঠিত কার্যক্রম।
সিআইডি বলছে, গ্রেপ্তারকৃত যুগলের বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী মামলা করার প্রস্তুতি চলছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা কনটেন্ট তৈরির কথা স্বীকার করেছে বলে জানা গেছে।
সিআইডির মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) তানজিনা রহমান বলেন, “আমরা যাচাই করছি, তাদের সঙ্গে অন্য কেউ যুক্ত আছে কি না। যদি কোনো সহযোগী নেটওয়ার্ক থাকে, তবে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।”
ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, ডিজিটাল যুগে এ ধরনের অপরাধ এখন আরও সূক্ষ্মভাবে ছড়াচ্ছে, যার বিরুদ্ধে সচেতনতা ও কঠোর আইন প্রয়োগ— দুইটিই জরুরি। ডিজিটাল নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, “দেশের অভ্যন্তর থেকে আন্তর্জাতিক পর্ন প্ল্যাটফর্মে সরাসরি কনটেন্ট প্রকাশ কেবল আইনের লঙ্ঘন নয়, বরং এটি সামাজিক অবক্ষয়ের অন্যতম কারণ হয়ে উঠছে। সাইবার ইউনিটগুলোর ধারাবাহিক নজরদারি অত্যন্ত প্রয়োজন।”
Leave a comment