২০২০ সালের ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফল বাতিল করে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম এই রায় ঘোষণা করেন। আদালতের এই রায়ে চার বছর আগের নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন ইশরাক হোসেন। আদালতের রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন এবং তাঁর সমর্থকদের সঙ্গে বিজয় মিছিলে অংশ নেন। আদালত চত্বরে উপস্থিত বিএনপি নেতাকর্মীরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। অনেকেই স্লোগান দিতে থাকেন এবং একে ‘গণতন্ত্রের বিজয়’ বলে অভিহিত করেন।
ইশরাক হোসেনের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম জানান, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে মামলা করেন ইশরাক। মামলার আরজিতে তিনি উল্লেখ করেন, নির্বাচনের সময় তাঁর গাড়িবহরে হামলা চালানো হয়, ইভিএমে ভোট জালিয়াতি করা হয় এবং ভোটারদের ভোটদানে বাধা দেওয়া হয়। তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস নির্বাচনী আইন লঙ্ঘন করে রঙিন পোস্টার লাগিয়েছিলেন এবং তাঁর (ইশরাকের) প্রচারণা সামগ্রী ছিঁড়ে ফেলা হয়। তাঁর কর্মী ও এজেন্টদের মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়। এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, নির্বাচনের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলসহ বিভিন্ন কেন্দ্রে ইশরাকের এজেন্টদের জোরপূর্বক বের করে দেওয়া হয়। এ সংক্রান্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনও আদালতে উপস্থাপন করা হয়। আদালত দীর্ঘ শুনানি শেষে ইশরাক হোসেনের পক্ষে রায় দেন এবং তাঁকে বৈধ মেয়র ঘোষণা করেন।
এই রায়ের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিএনপি নেতারা একে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন, অন্যদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই রায়ের ফলে ২০২০ সালের নির্বাচন নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হবে এবং এর রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাব পড়তে পারে।
ইশরাক হোসেন আদালতের রায়কে ‘সত্যের জয়’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমি সবসময়ই জানতাম, জনগণের রায় আমার পক্ষে ছিল। অবশেষে আদালতের রায়ে সত্য প্রতিষ্ঠিত হলো।” এখন দেখার বিষয়, এই রায়ের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হয় এবং তাপসের পক্ষ থেকে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয় কি না।
Leave a comment