আজ (২৬ অক্টোবর) গণঅধিকার পরিষদের চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ২০২১ সালের এই দিনে দলটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলেও এর বীজ রোপিত হয়েছিল আরও আগে — ২০১৮ সালের ঐতিহাসিক কোটা সংস্কার আন্দোলনে। সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আন্দোলনটি দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এক নতুন রাজনৈতিক চেতনার জন্ম দিয়েছিল।
কোটা আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা তরুণ নেতাদের হাত ধরেই পরে গঠিত হয় ‘গণঅধিকার পরিষদ’, যার মূল লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, অধিকার ও জাতীয় স্বার্থকে ভিত্তি করে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলা।
দলটির প্রতিষ্ঠার দিনেই ঘোষণা করা হয় ২১ দফা কর্মসূচি, যা মূলত দলটির আদর্শ, কর্মপদ্ধতি ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা তুলে ধরে। গণঅধিকার পরিষদের মূল স্লোগান — “জনতার অধিকার, আমাদের অঙ্গিকার” — দেশের সাধারণ মানুষের দাবি ও ন্যায়বিচারের পক্ষে দলটির অবস্থানকে প্রতিফলিত করে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ট্রাক প্রতীকে দলটি নিবন্ধন পায়, যা তাদের রাজনৈতিক যাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
গণঅধিকার পরিষদের অধীনে বর্তমানে বেশ কয়েকটি সক্রিয় অঙ্গসংগঠন রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
• বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ
• বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদ
• বাংলাদেশ নারী অধিকার পরিষদ
• বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ
• বাংলাদেশ শ্রমিক অধিকার পরিষদ
• বাংলাদেশ পেশাজীবী অধিকার পরিষদ
• বাংলাদেশ আইনজীবী অধিকার পরিষদ
এই সংগঠনগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে একত্রিত করে সমাজ ও রাষ্ট্র সংস্কারের বৃহত্তর আন্দোলনে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দলটি।
দল গঠনের আগেই ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদ নানা জনসম্পৃক্ত আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয় ছিল। যেমন—
• নিরাপদ সড়ক আন্দোলন
• আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদ
• কৃষকদের ন্যায্য মূল্য দাবি আন্দোলন
• দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
• মোদির আগমনবিরোধী আন্দোলন
এ আন্দোলনগুলোয় অংশ নেওয়ার কারণে বহু নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের শিকার হন। বিশেষ করে ২০২১ সালে মোদির আগমনবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের ৫৪ জন নেতা-কর্মী কারাভোগ করেন।
২০২৩ সালে আবরার ফাহাদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচিতে হামলার শিকার হয় সংগঠনের নেতা-কর্মীরা; সেদিন ১৪ জনকে আটক করা হয়। বিগত সরকারের আমলে স্বৈরাচারবিরোধী নানা যৌক্তিক দাবিতে সোচ্চার ছিল গণঅধিকার পরিষদ। হামলা-মামলা ও দমননীতির মুখেও তারা রাজপথ ছাড়েনি।
২০২৪ সালের ছাত্র–জনতার আন্দোলনের সময় প্রথম রাজনৈতিক দল হিসেবে গণঅধিকার পরিষদ আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি ঘোষণা করে এবং সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। গণঅধিকার পরিষদ এখন “রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন–২০২৪”-এর ধারাবাহিকতায় নতুন বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যাশা নিয়ে এগোচ্ছে। তাদের লক্ষ্য, একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও নাগরিক অধিকারনির্ভর রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা — যেখানে শিক্ষা, কর্মসংস্থান, ন্যায়বিচার ও গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ সবার জন্য সমানভাবে নিশ্চিত থাকবে।
দলীয় সূত্র মতে, ২০২৫ সালের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সারা দেশে আলোচনা সভা, মানববন্ধন ও গণসংলাপের আয়োজন করা হচ্ছে। চার বছরের যাত্রায় গণঅধিকার পরিষদ একদিকে আন্দোলনের রাজনীতি থেকে গণদলীয় রাজনীতিতে রূপান্তরের উদাহরণ স্থাপন করেছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের এক নতুন ধারাও সৃষ্টি করেছে। কোটা সংস্কার থেকে রাষ্ট্র সংস্কারের অভিযাত্রায় তাদের এই চার বছরের পথচলা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
Leave a comment