আগস্টেই দেশে ফিরছেন তারেক রহমান, দেওয়া হবে লাল গালিচার অভ্যর্থনা

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরবেন, এমন গুঞ্জন রাজনৈতিক অঙ্গনে ছড়িয়ে পড়েছে। বিএনপি নেতাদের দাবি, তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঘিরে দলীয়ভাবে নানা প্রস্তুতি চলছে। যদিও এই মুহূর্তে তার দেশের ফিরতি সময়সূচি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা যাচ্ছে না, বিএনপির নেতারা একযোগভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরছেন।

বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, আগস্ট মাসের শেষ নাগাদ তারেক রহমানের দেশে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে এই বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি। সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর এসেছে, তারেক রহমানের দেশে ফিরতে হলে বেশ কিছু বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। বিশেষত, তার নিরাপত্তা, বাসভবন, রাজনৈতিক কার্যালয়সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে।

এই বিষয়ে বিএনপির কয়েকজন উচ্চপদস্থ নেতা জানান, তারা তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে একটি রাজনৈতিক মাইলফলক হিসেবে দেখতে চান। তবে কবে তিনি দেশে ফিরবেন, তা নিশ্চিত নয়। এ বিষয়ে বিএনপি নেতারা বলছেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়টি জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়গুলো মাথায় রেখে নির্ধারণ করা হবে।

তারেক রহমানের দেশে ফেরার সম্ভাবনা নিয়ে বিএনপির উচ্চপর্যায়ের নেতাদের মধ্যে আলোচনা চলছে। বেশ কিছু নেতা মনে করছেন, তারেক রহমান যদি আগস্টে দেশে ফেরেন, তবে এটি বিএনপির জন্য এক বড় রাজনৈতিক ঘটনা হতে পারে। তবে অন্যদিকে, বর্ষাকালের কারণে, বিশেষত আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে বৈরী আবহাওয়া থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, যা তার ফেরার পর আয়োজিত জনসমাগমের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

এ বিষয়ে দলের এক সিনিয়র নেতা বলেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরার জন্য সবকিছু প্রস্তুত। বিমানবন্দরসহ ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় তার অবতরণকে স্মরণীয় করে তুলতে বিএনপি বড় জমায়েতের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে তাদের এই প্রস্তুতি বর্ষা মৌসুমে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে পারে, তা নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা রয়েছে।

অন্যদিকে, বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে একটা দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় রয়েছে যে, তারেক রহমানের দেশে ফিরে আসা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটি বড় রাজনৈতিক ঘটনা হতে পারে। এমনকি দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমানের দেশে ফেরার দিন, আওয়ামী লীগের সরকারের বিরুদ্ধে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময় হতে পারে।

একটি সূত্র জানায়, বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে, তারেক রহমান যদি দেশে ফিরে আসেন, তবে তাকে লাল গালিচায় অভ্যর্থনা জানানো হতে পারে, আর তা হতে পারে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে। সেই সঙ্গে বলা হচ্ছে, নির্বাচনের দিন তারেক রহমানের উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, কারণ তারেক রহমানের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করতে সহায়ক হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরাটা একটি নির্বাচনী শোডাউনের অংশ হতে পারে। তার মতে, যদি নির্বাচন তফসিল ঘোষণার আগেই তারেক রহমান দেশে ফেরেন, তবে তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে শক্তিশালী অবস্থান নিতে পারে।

বিএনপির নেতারা মনে করছেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরার ক্ষেত্রে সময় ও স্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা বলছেন, কোন সময় দেশে ফিরলে তা বিএনপির রাজনৈতিক অর্জন এবং তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন উজ্জ্বল হবে, সেটিই দেখার বিষয়।

এছাড়া, বিএনপির নেতারা তারেক রহমানের দেশে ফেরার পর ঢাকার গুলশানে তার বাসভবনে থাকার কথা উল্লেখ করেছেন। গুলশান-২ অ্যাভিনিউ রোডের ১৯৬ নম্বর বাড়ি, যা ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, বর্তমানে তা সংস্কারের মধ্যে রয়েছে। জানা গেছে, বাড়িটি সম্প্রতি ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, এবং এখন নতুন করে সংস্কার কাজ চলছে।

২০০৭ সালে তারেক রহমানের গ্রেপ্তার ও পরবর্তীতে ২০০৮ সালে লন্ডনে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য চলে যাওয়ার ঘটনা রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত ছিল। তখন থেকেই তারেক রহমানের দেশে ফেরার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা চলছে। দীর্ঘ ১৭ বছর পর তার দেশে ফিরতে যাওয়ার বিষয়টি বিএনপি নেতাদের জন্য এক নতুন রাজনৈতিক দিক নির্দেশ করতে পারে।

অন্যদিকে, তারেক রহমানের দেশে ফিরতে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি জানান, বর্তমানে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কোনো আইনি প্রতিবন্ধকতা নেই, ফলে তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সম্ভব।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরবেন। তিনি বলেন, ‘তারেক সাহেব নিশ্চয়ই দেশে ফিরবেন, তবে কবে ফিরবেন সে প্রশ্নের উত্তর জানা নেই।’ গত জুনে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানিও তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে ইতিবাচক বক্তব্য দেন।

এতদিন পর তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়টি বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে তীব্র আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। এমনকি দলের মধ্যে সম্ভাব্য প্রাপ্তি ও চ্যালেঞ্জ দুটোই মাথায় রেখে তাঁরা এই পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন।