অস্ট্রেলিয়ায় ৪৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রতারণার অভিযোগে এক নারী জ্যোতিষী তার মেয়েকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের তথ্যমতে, ৫৩ বছর বয়সী এই নারী নিজেকে ভবিষ্যদ্বক্তা ও ফেং শুই বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচয় দিতেন। ভুক্তভোগীদের তিনি বড় অঙ্কের ঋণ নিতে প্রলুব্ধ করতেন। ঋণের অংশ তিনি নিজের কাছে রাখতেন এবং ভুক্তভোগীদের আশ্বাস দিতেন, তাদের ভাগ্য শীঘ্রই পরিবর্তিত হবে যদি তারা তার পরামর্শ মেনে চলে।
বুধবার সকালে সিডনির অভিজাত এলাকা ডোভার হাইটসে তাদের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। পুলিশ বহু-মিলিয়ন ডলারের আর্থিক নথি, মোবাইল ফোন, বিলাসবহুল হ্যান্ডব্যাগ, ৪০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণের বার (মূল্য প্রায় ১০,০০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার) এবং ৬,৬০০ ডলারের ক্যাসিনো চিপ জব্দ করেছে।
নারী জ্যোতিষীকে ৩৯টি অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে প্রতারণার মাধ্যমে আর্থিক সুবিধা অর্জন ও অপরাধচক্র পরিচালনা। তাকে জামিন না দিয়ে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করা হবে। তার কন্যাকে সাতটি অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে অপরাধচক্রে অংশগ্রহণ ও আর্থিক ব্যবস্থাপনায় বেপরোয়া আচরণ। কন্যাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে এবং আগামী জানুয়ারিতে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ প্রায় ১৫ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলারের সম্পদ ফ্রিজ করেছে, যা গত বছর শুরু হওয়া চলমান তদন্তে এরইমধ্যে জব্দ করা ৬০ মিলিয়ন ডলারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এই তদন্ত, যার নাম স্ট্রাইক ফোর্স মিডলটন, শুরু হয়েছিল একটি বিলাসবহুল গাড়ি অর্থায়ন প্রতারণা তদন্ত হিসেবে, যেখানে “ঘোস্ট কার” — অর্থাৎ, অস্তিত্বহীন গাড়ি — ব্যবহার করা হয়েছিল। পরে এটি অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম বৃহত্তম আর্থিক অপরাধ তদন্তে পরিণত হয়। ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইমস স্কোয়াডের প্রধান গোয়েন্দা সুপারিনটেনডেন্ট গর্ডন আরবিনজা বলেন,“এটি আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে জটিল আর্থিক অপরাধ সিন্ডিকেটগুলোর একটি।”
পুলিশ দাবি করেছে, “পেন্টহাউস সিন্ডিকেট” নামে পরিচিত এই চক্রটি দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় জাল ঋণের মাধ্যমে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলারের সম্পত্তি অর্জনের চেষ্টা করেছে। ইতিমধ্যেই ১২ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে গ্রেফতার, প্রতারণা ও অর্থপাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার এই ঘটনা আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অপরাধের জটিল প্রকৃতি তুলে ধরছে। বিশেষ করে, ধারাবাহিকভাবে দুর্বল সম্প্রদায়ের ওপর প্রভাব বিস্তার করে, জাল প্রতিশ্রুতি দিয়ে অর্থ উপার্জন করা একটি চিন্তার বিষয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরণের চক্র রোধে কড়া আর্থিক নিয়ন্ত্রণ এবং শক্তিশালী আইন প্রয়োগ অপরিহার্য।
Leave a comment