গাজার খান ইউনিসের নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সে পাঁচ দিন কাটিয়ে ফিরে সাংবাদিকেরা যা দেখেছেন, তা যেন এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের দলিল। হাসপাতালের তীব্র অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের ওয়ার্ডে গোলাপি রঙের দেয়ালে আঁকা হাস্যোজ্জ্বল কার্টুন শিশুদের চেহারার বিপরীতে পড়ে যেন ব্যঙ্গ করে হাসছে। বিছানায় শুয়ে থাকা কঙ্কালসার শিশুদের অনেকেই কাঁদার শক্তিও হারিয়ে ফেলেছে।
রয়টার্স জানায়, নাসের হাসপাতালে গত সপ্তাহে তীব্র অপুষ্টিতে ভোগা ৫৩ জন শিশু ভর্তি হয়েছে। গাজায় শিশুদের চিকিৎসার জন্য থাকা মাত্র চারটি চিকিৎসাকেন্দ্রের একটি এটি। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, খাদ্য, দুধ ও ওষুধের তীব্র ঘাটতি রয়েছে। শিশুরা কেবলই দুর্বল হচ্ছে, তাদের দেহে মাংসপেশি নেই বললেই চলে। তিন মাস বয়সী শিশুটির ওজন জন্মের সময়ের চেয়েও কমে গেছে—এমন নজিরও রয়েছে।
হাসপাতালে আসা মা জেইনা রাদওয়ান বলেন, তাঁর ১০ মাস বয়সী মেয়ে মারিয়া পুরো সময় বিছানায় নিথর পড়ে থাকে। দুধের অভাবে মেয়েটিকে খাওয়াতে পারছেন না, কারণ মা নিজেও দিনে এক বেলা খেতে পারছেন না।
হাসপাতালের শিশু বিভাগপ্রধান আহমেদ আল-ফররা জানান, শুধু চিকিৎসা সামগ্রী নয়, পুষ্টিকর খাবারের তীব্র প্রয়োজন রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলোর বরাতে বলা হয়েছে, গাজায় অনাহারে ৮৯টি শিশুসহ ১৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ইসরায়েলি অবরোধ ও ত্রাণ সীমাবদ্ধতার কারণেই পরিস্থিতি এত ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। যদিও ইসরায়েল দাবি করছে, ত্রাণ পৌঁছাতে তারা বাধা দিচ্ছে না, বরং সহযোগিতা করছে, বাস্তব চিত্র তার বিপরীত।
চিকিৎসকেরা বলছেন, যারা আগে থেকেই দুর্বল ছিল, তারাই প্রথমে মারা যাচ্ছে। তবে এখন সুস্থ জন্ম নেওয়া শিশুরাও মরণাপন্ন। পাঁচ মাসের শিশু জয়নাব আবু হালিব শেষ পর্যন্ত বাঁচেনি। হাসপাতালের শয্যা থেকে উঠে তাকে সাদা কাফনে মুড়িয়ে চলে যেতে হয়েছে কবরস্থানে।
জাতিসংঘ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, সময়মতো ব্যাপক ত্রাণ না এলে গাজায় বাস্তব দুর্ভিক্ষ অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠবে। আর তা হবে বিশ্বব্যাপী বিবেকের ওপর এক নির্মম আঘাত।
Leave a comment