পুলিশ সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় শারীরিক প্রতিবন্ধী এক অটোচালককে হত্যা করে অটো মিশুক ছিনতাইয়ের ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে। ঘটনায় জড়িত চারজন আসামিকে গ্রেফতার ও উদ্ধার করা হয়েছে ছিনতাই হওয়া গাড়ির যন্ত্রাংশসহ বডি ।
জেলা গোয়েন্দা শাখার ওসি মো. একরামুল হোসাইন সোমবার (২১ জুলাই) সন্ধ্যায় তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন । নিহত রুহুল আমিন জেলহক (২০) একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী ও পেশায় ব্যাটারি চালিত অটো মিশুক চালক ছিলেন।
পুলিশ জানায়, গত ১৩ জুলাই বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জেলহক বাড়ি থেকে অটো মিশুক নিয়ে বের হন। রাত ১০টা পেরিয়ে গেলেও সে ফিরে না আসায় পরিবারের লোকজন ফোন করলে তার মোবাইল বন্ধ পান। পরদিন আত্মীয়-স্বজন বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও কোনো সন্ধান মেলেনি। অবশেষে ১৮ জুলাই বিকেলে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে দুর্গানগর ইউনিয়নের ক্ষুদ্র মনোহরা গ্রামের ফুলঝার নদীতে কচুরিপানার নিচে গামছা প্যাঁচানো অবস্থায় ভেসে থাকা একটি অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহটি জেলহকের বলে শনাক্ত করেন পরিবারের লোকজন।
নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দেন পুলিশ সুপার মো. ফারুক হোসেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপস্ ও ক্রাইম) মো. হাফিজুর রহমান, সহকারী পুলিশ সুপার (উল্লাপাড়া সার্কেল) মো. আসাদুজ্জামান শাকিল, জেলা গোয়েন্দা শাখার ওসি মো. একরামুল হোসাইন এবং উল্লাপাড়া মডেল থানার ওসি মো. রাকিবুল হাসানের নেতৃত্বে গঠন করা হয় একটি চৌকস তদন্ত টিম।
তদন্তকারী টিম তথ্যপ্রযুক্তি এবং গোপন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত চার আসামি, হাফিজুল ইসলাম (৪০), জাকারিয়া হোসেন (৩০), মঞ্জেল সরদার (৪০) ও ওমর ফারুক (২৫) কে গ্রেফতার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, অটো মিশুক ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে তারা পরিকল্পিতভাবে জেলহককে হত্যা করে। হত্যার পর গাড়ির ৪টি ব্যাটারি, ৩টি চাকা, ২টি লোহার সকাপ খুলে আলাদা আলাদা বিক্রি করে এবং বডিটি ফেলে দেয় উল্লাপাড়া থানার বড়পাঙ্গাসী নদীপাড়ের একটি পুকুরে।
গ্রেফতারকৃতদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পুলিশ অটো মিশুকের বডি, ব্যাটারি, চাকা ও যন্ত্রাংশসহ আসামিদের ব্যবহৃত চারটি মোবাইল ফোন জব্দ করেছে। চার আসামির মধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে তিনজন।
সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. ফারুক হোসেন বলেন, এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। জেলহকের পরিবারের প্রতি সমবেদনা রয়েছে আমাদের। এ ঘটনার পেছনে যারা ছিল, তাদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা ।
স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, অটোচালক জেলহক ছিলেন একজন অতি সাধারণ ও নিরীহ যুবক। তার এই নির্মম হত্যাকাণ্ডে এলাকায় চরম ক্ষোভ ও শোকের ছায়া নেমে আসে। পুলিশের তৎপরতায় আসামিরা গ্রেফতার ও মালামাল উদ্ধার হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।
Leave a comment