পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ায় মাগরিবের নামাজের সময় জনাকীর্ণ একটি মসজিদে ভয়াবহ বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বর্নো প্রদেশে সংঘটিত এই হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় আরও অন্তত ৩৫ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
পুলিশের মুখপাত্র নাহুম দাসো জানান, স্থানীয় সময় সন্ধ্যার দিকে নামাজ চলাকালে বিস্ফোরণটি ঘটে। আহতদের দ্রুত নিকটবর্তী হাসপাতালগুলোতে ভর্তি করা হয়েছে। তবে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিবিসি ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বর্নো প্রদেশের রাজধানী মাইদুগুরির গাম্বোরু মার্কেট এলাকার একটি মসজিদে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। মাগরিবের নামাজের সময় মুসল্লিদের উপস্থিতি বেশি থাকায় হতাহতের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোতে বিস্ফোরণের পরপরই চরম আতঙ্কের চিত্র দেখা যায়। ধুলা ও ধোঁয়ায় ঢেকে যায় আশপাশের এলাকা, মার্কেটের ভেতর ও বাইরে মানুষজন প্রাণ বাঁচাতে দিগ্বিদিক ছুটতে থাকে। আহতদের অনেককে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করতে দেখা যায়।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিস্ফোরণের কারণ তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি এবং এখনও পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলো জানিয়েছে।
আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পুলিশ মুখপাত্র নাহুম দাসো বলেন, বিস্ফোরণের পরপরই একটি বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। সম্ভাব্য আরও বিস্ফোরক রয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করতে পুরো এলাকা ঘিরে তল্লাশি চালানো হয়। নিরাপত্তাজনিত কারণে শুরুতে সরকারিভাবে হতাহতের নির্দিষ্ট সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি।
হামলার পর হতাহতের সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন সূত্রে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে। মসজিদের ইমাম মাওলানা আবুনা ইউসুফ আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, অন্তত আটজন নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে বাবাকুরা কলো নামে স্থানীয় এক মিলিশিয়া নেতা দাবি করেছেন, নিহতের সংখ্যা সাত।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মুসা ইউশাউ জানান, বিস্ফোরণের পর তিনি বহু আহত ব্যক্তিকে স্বেচ্ছাসেবক ও নিরাপত্তা কর্মীদের সহায়তায় হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখেছেন। তার ভাষায়, “চারদিকে শুধু আর্তচিৎকার আর আতঙ্ক—মানুষ বুঝে উঠতে পারছিল না কী ঘটছে।”
মাইদুগুরি শহর দীর্ঘদিন ধরেই জঙ্গি সংগঠন বোকো হারাম এবং তাদের সহযোগী আইএস পশ্চিম আফ্রিকা প্রদেশ (আইএসডব্লিউএপি)-এর তৎপরতার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। ২০০৯ সালে বর্নো প্রদেশকে ঘিরে ইসলামি খিলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে বোকো হারাম সশস্ত্র অভিযান শুরু করে।
এরপর এক দশকেরও বেশি সময় ধরে উত্তর-পূর্ব নাইজেরিয়ায় মসজিদ, বাজার, নিরাপত্তা চৌকি ও জনাকীর্ণ স্থানে আত্মঘাতী হামলা এবং আইইডি বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠী। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে এসব হামলার মাত্রা কিছুটা কমেছিল, তবু পুরোপুরি বন্ধ হয়নি।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে শুরু হওয়া এই সহিংসতায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৪০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন এবং প্রায় ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। শুধু নাইজেরিয়াই নয়, এই সহিংসতার প্রভাব পড়েছে প্রতিবেশী নাইজার, চাদ ও ক্যামেরুনেও।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সামরিক অভিযানে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর বড় ক্ষতি হলেও তারা ছোট আকারের কিন্তু প্রাণঘাতী হামলা চালানোর সক্ষমতা এখনও ধরে রেখেছে। সাম্প্রতিক এই বিস্ফোরণ সেই বাস্তবতাই নতুন করে সামনে আনছে।
Leave a comment