তুরস্ক থেকে নিজ দেশে ফেরার পথে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় লিবিয়ার সেনাপ্রধান আল-হাদ্দাদ নিহত হয়েছেন। একই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন লিবিয়ার সামরিক বাহিনীর আরও কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা। এই মর্মান্তিক ঘটনার খবর নিশ্চিত করে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী আবদুলহামিদ দবেইবা।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে তুরস্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ডসহ একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারা থেকে ত্রিপোলির উদ্দেশে যাত্রা করা একটি প্রাইভেট জেট বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনাকবলিত বিমানটিতে আল-হাদ্দাদসহ লিবিয়ার সামরিক বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন লিবিয়ার স্থলবাহিনীর চিফ অব স্টাফ, সামরিক শিল্প কর্তৃপক্ষের প্রধান, সেনাপ্রধানের একজন ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা এবং সামরিক মিডিয়া অফিসের একজন আলোকচিত্রী। এই প্রতিনিধিদলটি তুরস্কে সরকারি সফর শেষে দেশে ফিরছিল বলে জানা গেছে।
প্রধানমন্ত্রী আবদুলহামিদ দবেইবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক বার্তায় বলেন, “অত্যন্ত বেদনাহত হৃদয়ে আমি এই দুঃসংবাদ নিশ্চিত করছি। আল-হাদ্দাদ ও তার সহকর্মীদের মৃত্যু জাতি ও সশস্ত্র বাহিনীর জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।” তিনি নিহতদের পেশাদারিত্ব, শৃঙ্খলা এবং জাতীয় দায়িত্ববোধের প্রশংসা করে বলেন, তারা নিষ্ঠার সঙ্গে দেশের সেবা করে গেছেন।
তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ইয়েরলিকায়া দুর্ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে বলেন, আঙ্কারার এসেনবোবা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের অল্প সময়ের মধ্যেই বিমানটির সঙ্গে রেডিও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে আঙ্কারার দক্ষিণাঞ্চলের হায়মানা জেলায় একটি প্রাইভেট জেটের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা হয়, যা দুর্ঘটনাকবলিত বিমানটির বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে।
মন্ত্রী জানান, ফ্যালকন–৫০ মডেলের ওই বিজনেস জেটটি স্থানীয় সময় রাত ৮টা ১০ মিনিটে ত্রিপোলির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। উড্ডয়নের প্রায় ৪০ মিনিট পর, রাত ৮টা ৫২ মিনিটে বিমানটির সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এর আগে বিমানটি জরুরি অবতরণের সংকেত পাঠিয়েছিল, তবে সেই সংকেতের পর আর কোনো যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।
তুর্কি গণমাধ্যম এনটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানী আঙ্কারার আকাশসীমায় বিমানটির সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে যাওয়ার পরপরই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে এসেনবোবা বিমানবন্দর থেকে কয়েকটি ফ্লাইটের রুট পরিবর্তন করা হয়। একই সঙ্গে উদ্ধার ও অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করা হয়, যা পরে হায়মানা এলাকায় ধ্বংসাবশেষ উদ্ধারের মাধ্যমে শেষ হয়।
বিমানে মোট পাঁচজন আরোহী ছিলেন বলে তুরস্কের কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে। দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানানো না হলেও- কারিগরি ত্রুটি, আবহাওয়াজনিত সমস্যা কিংবা অন্য কোনো সম্ভাব্য কারণ খতিয়ে দেখতে যৌথ তদন্ত শুরু করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
এই দুর্ঘটনা লিবিয়ার সামরিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। আল-হাদ্দাদ ছিলেন লিবিয়ার সামরিক বাহিনীর একজন প্রভাবশালী ও অভিজ্ঞ নেতা, যিনি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের নিরাপত্তা কাঠামো পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তার আকস্মিক মৃত্যু শুধু সামরিক নেতৃত্বেই নয়, বরং সামগ্রিকভাবে দেশের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড় ধরনের শূন্যতা তৈরি করতে পারে বলে বিশ্লেষকদের মত।
তুরস্ক ও লিবিয়ার মধ্যে সামরিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ও কৌশলগত আলোচনায় অংশ নিতে লিবিয়ার শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা প্রায়ই তুরস্ক সফর করে থাকেন। এই প্রেক্ষাপটে দুর্ঘটনাটি দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও একটি সংবেদনশীল মুহূর্ত তৈরি করেছে।
নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী দবেইবা বলেন, “এই শোক শুধু পরিবারগুলোর নয়, সমগ্র লিবিয়ান জাতির।” তিনি দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান এবং বলেন, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় নিহতদের স্মরণে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
Leave a comment