খুলনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রমিক সংগঠন ‘শ্রমিক শক্তি’র খুলনা বিভাগীয় কমিটির আহ্বায়ক মোতালেব শিকদার গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় যুবশক্তির এক নেত্রীকে আটক করেছে খুলনা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
ডিবি পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাতের দিকে নগরীর টুটপাড়া এলাকা থেকে তনিমা তন্বী নামের ওই নেত্রীকে আটক করা হয়। তিনি যুবশক্তির খুলনা জেলা কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। খুলনা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৈমুর ইসলাম আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে এবং ঘটনার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা থানাধীন আল আকসা মসজিদ রোডের ১০৯ নম্বর মুক্তা হাউজের নিচতলার একটি বাসায় গুলিবিদ্ধ হন এনসিপি শ্রমিক শক্তির খুলনা বিভাগীয় কমিটির আহ্বায়ক মোতালেব শিকদার। গুলির শব্দ শুনে আশপাশের লোকজন দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এবং রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে নিকটবর্তী একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
দিনদুপুরে একটি আবাসিক ভবনের ভেতরে এ ধরনের গুলির ঘটনা ঘটায় এলাকাজুড়ে তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। খবরটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় রাজনীতির পাশাপাশি জাতীয় পর্যায়েও ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। এনসিপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ সংশ্লিষ্ট বাসা থেকে বেশ কয়েকটি আলামত জব্দ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্যবহৃত গুলির খোসা, মাদক সেবনের কিছু সরঞ্জাম এবং মদের বোতল। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এসব আলামত ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করা হবে, যা ঘটনার প্রকৃত কারণ ও জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
পুলিশ বলছে, প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি পরিকল্পিত ছিল নাকি তাৎক্ষণিক কোনো বিরোধ বা ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব থেকে ঘটেছে—তা এখনো নিশ্চিত নয়। রাজনৈতিক অভ্যন্তরীণ কোন্দল, আর্থিক লেনদেন কিংবা অন্য কোনো অপরাধমূলক উদ্দেশ্য—সব দিক মাথায় রেখে তদন্ত এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আটক যুবশক্তি নেত্রী তনিমা তন্বীর সঙ্গে ঘটনার সময় ও স্থান সংশ্লিষ্ট যোগাযোগ, চলাফেরা এবং সম্ভাব্য সম্পৃক্ততা যাচাই করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে এনসিপির স্থানীয় নেতারা প্রকাশ্যে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেননি।
খুলনা মহানগর পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্য কোনো ব্যক্তি আছে কি না, তা শনাক্তে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, মোবাইল কল রেকর্ড পর্যালোচনা এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দি নেওয়া হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে আপাতত সব তথ্য প্রকাশ করা যাচ্ছে না, তবে প্রমাণের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
Leave a comment