মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের অভ্যন্তরে পুঁতে রাখা ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে দুইজন রোহিঙ্গা গুরুতর আহত হয়েছেন। ঘটনাটি ঘটে তোতার দীপ নাচ দং এলাকায়, যা বাংলাদেশের সীমান্ত পিলার নম্বর–১৯ থেকে আনুমানিক চার কিলোমিটার ভেতরে অবস্থিত। স্থানীয় সূত্রগুলো দাবি করছে, সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির পুঁতে রাখা ল্যান্ডমাইন থেকেই এই বিস্ফোরণ ঘটেছে। তবে বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিক তদন্ত এখনো চলমান।
আহত দুই রোহিঙ্গাকে মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালংয়ে অবস্থিত ‘মেডিসিনস সঁ সঁ ফ্রঁতিয়ের’ (এমএসএফ) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের কারণে দুজনের শরীরে গুরুতর আঘাত লেগেছে এবং তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। আহতদের পরিচয় ও বয়স তাৎক্ষণিকভাবে জানা না গেলেও তারা সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসকারী রোহিঙ্গা বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দারা বলছেন, সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণের ঘটনা নতুন নয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এমন ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে
বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, সীমান্ত সংলগ্ন এলাকাগুলোতে সশস্ত্র গোষ্ঠী ও
মাদক চক্রের তৎপরতা বেড়েছে। তার ভাষ্য অনুযায়ী, এসব এলাকায় ল্যান্ডমাইন পুঁতে রাখা হয়েছে বলে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় মাইন পুঁতে রাখা ও অবৈধ কার্যক্রমের কারণে নিরীহ মানুষের জীবন ও নিরাপত্তা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে। সাধারণ মানুষ জানে না কোথায় ঝুঁকি রয়েছে, ফলে চলাফেরা করাই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।” তিনি আরও দাবি করেন, সীমান্ত দিয়ে মাদক পাচারও চলছে, যা শুধু নিরাপত্তার জন্য নয়, সমাজ ও তরুণ প্রজন্মের জন্যও বড় ধরনের হুমকি।
এ বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ল্যান্ডমাইন ব্যবহার মানবিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, ল্যান্ডমাইন নির্বিচারে ক্ষতি করে এবং যুদ্ধ বা সংঘাত শেষ হলেও বহু বছর ধরে সাধারণ মানুষের জন্য প্রাণঘাতী ঝুঁকি তৈরি করে রাখে। আরাকান রাজ্যে চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে এমন ঝুঁকি আরও বেড়েছে।
রোহিঙ্গা কমিউনিটির প্রতিনিধিরা বলেন, সীমান্তের দুই পাশে বসবাসকারী সাধারণ মানুষই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়ছেন। অনেক সময় জীবিকার তাগিদে বা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে তারা দুর্গম পথ ব্যবহার করতে বাধ্য হন, যেখানে ল্যান্ডমাইনের উপস্থিতি সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা থাকে না। ফলে এমন দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা বাড়ছে।
এমএসএফের চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে আসা বিস্ফোরণজনিত আহত রোগীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। তারা বলেন, “এই ধরনের আঘাত শুধু শারীরিক নয়, মানসিকভাবেও মারাত্মক প্রভাব ফেলে। দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের প্রয়োজন হয়।”
সীমান্ত নিরাপত্তা ও মানবিক সংকট—এই দুইয়ের মধ্যকার জটিল বাস্তবতায় আরাকান রাজ্য ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের পরিস্থিতি দিন দিন আরও স্পর্শকাতর হয়ে উঠছে। সর্বশেষ এই ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ আবারও মনে করিয়ে দিল, সংঘাতপূর্ণ এলাকায় সাধারণ মানুষই সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনার পাশাপাশি স্থানীয়দের প্রত্যাশা—ঝুঁকি কমাতে কার্যকর ও সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হবে, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো নিরীহ মানুষকে এমন ভয়াবহ পরিণতির মুখোমুখি হতে না হয়।
Leave a comment