রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা ও মেয়েকে হত্যার আলোচিত মামলায় গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি এসেছে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার গৃহকর্মী আয়েশা আদালতে নিজের অপরাধ স্বীকার করেছেন। বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশীতা ইসলামের আদালতে হাজির করা হলে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। শুনানি শেষে আদালত তার জবানবন্দি গ্রহণ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ছয় দিনের রিমান্ড শেষে আয়েশাকে আদালতে তোলা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এবং মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক সহিদুল ওসমান মাসুম আসামির স্বীকারোক্তি গ্রহণের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তার বক্তব্য লিপিবদ্ধ করা হয়।
এই হত্যাকাণ্ডে আরেক অভিযুক্ত হিসেবে আয়েশার স্বামী রাব্বি সিকদারও তদন্তের আওতায় রয়েছেন। পুলিশ জানায়, গত ১০ ডিসেম্বর ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার চরকয়া গ্রাম থেকে আয়েশা ও রাব্বি সিকদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন ১১ ডিসেম্বর আদালত আয়েশার ছয় দিন এবং রাব্বি সিকদারের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে ১৪ ডিসেম্বর রাব্বি সিকদার আদালতে হাজির হয়ে মামলায় নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দুই আসামির স্বীকারোক্তি মামলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে তদন্তের স্বার্থে জবানবন্দির বিস্তারিত বিষয়বস্তু এই মুহূর্তে প্রকাশ করা হয়নি। পুলিশ বলছে, হত্যাকাণ্ডের পেছনের উদ্দেশ্য, পরিকল্পনা এবং সম্ভাব্য আরও কারও সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না—এসব বিষয় গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মোহাম্মদপুরের এই দ্বৈত হত্যাকাণ্ডটি নগরবাসীর মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। নিহত লায়লা ফিরোজ এবং তার কন্যার মৃত্যু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। ঘটনার পরপরই দ্রুত তদন্ত শুরু করে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ, যার অংশ হিসেবে সন্দেহভাজনদের গতিবিধি, পারিবারিক ও পেশাগত সম্পর্ক এবং ঘটনার সময়কার আলামত সংগ্রহ করা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, প্রযুক্তিগত তথ্য, পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য এবং জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য আদালতে উপস্থাপন করা হলে তা তদন্তে নতুন দিকনির্দেশনা দেয়।
এই মামলায় নিহত লায়লা ফিরোজের স্বামী আ জ ম আজিজুল ইসলাম গত ৮ ডিসেম্বর মোহাম্মদপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে অজ্ঞাতনামা আসামিদের পাশাপাশি পারিপার্শ্বিক সন্দেহের বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়। পরবর্তীতে তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ নির্দিষ্ট অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, রাজধানীতে সংঘটিত গুরুতর অপরাধের দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য। এই মামলায়ও সব প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা আরও জানান, তদন্ত এখনো চলমান এবং প্রয়োজনে নতুন করে রিমান্ড আবেদনসহ অন্যান্য আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।
Leave a comment