চট্টগ্রামের আন্ডারওয়ার্ল্ডে বহুল আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ আরও তিনটি হত্যা মামলায় জামিন পেয়েছেন। এর আগে চারটি মামলায় জামিন পাওয়ার পর সর্বশেষ জামিনগুলো যুক্ত হওয়ায় মোট সাতটি হত্যা মামলায় তিনি জামিন লাভ করলেন। তবে একাধিক মামলায় স্বস্তি পেলেও আপাতত কারামুক্ত হচ্ছেন না তিনি।
কারা সূত্র জানায়, উচ্চ আদালত থেকে পাওয়া জামিনসংক্রান্ত কাগজপত্র ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছেছে। মঙ্গলবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সর্বশেষ যে তিনটি হত্যা মামলায় তিনি জামিন পেয়েছেন, সেগুলো চান্দগাঁও থানার তানভীর ছিদ্দিকী হত্যা মামলা, হৃদয় চন্দ্র তারুয়া হত্যা মামলা এবং ফজলে রাব্বী হত্যা মামলা।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার শাহ সৈয়দ শরীফ জানান, ছোট সাজ্জাদের বিরুদ্ধে থাকা সাতটি হত্যা মামলার জামিনের নথি কারাগারে এসেছে। তবে এসব মামলায় জামিন পেলেও তার বিরুদ্ধে আরও মামলা বিচারাধীন থাকায় এখনই মুক্তি মিলছে না।
চার মামলায় জামিন পাওয়ার খবরের পরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নতুন করে তৎপর হয়। গত রোববার চান্দগাঁও থানার আরও দুটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়েছে। একই সঙ্গে নগরীর অন্যান্য থানায় থাকা মামলাগুলোতেও গ্রেপ্তার দেখানোর আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) সূত্র জানিয়েছে।
সিএমপির কর্মকর্তারা বলছেন, ছোট সাজ্জাদ যেন কোনোভাবেই কারাগার থেকে বের হতে না পারেন, সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সাজ্জাদ হোসেনের বিরুদ্ধে মোট ১৯টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ১০টিই হত্যা মামলা। এসব মামলার মধ্যে চট্টগ্রামের আলোচিত জোড়া খুনসহ একাধিক চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, “একাধিক মামলায় জামিন পেলেও বাকি মামলাগুলোতে তাকে আইনিভাবে আটক রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।”
ছোট সাজ্জাদের অপরাধ জগতের প্রভাব তার পরিবারকেও ঘিরে রেখেছে। পুলিশ জানায়, তার স্ত্রী শারমিন আক্তার তামান্নার বিরুদ্ধেও একাধিক হত্যা মামলাসহ অন্তত আটটি মামলা রয়েছে। বর্তমানে সাজ্জাদ রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি এবং তার স্ত্রী তামান্না ফেনী জেলা কারাগারে আটক রয়েছেন।
এর আগে গত ১০ মে নগরের চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাট বাড়ইপাড়া এলাকা থেকে তামান্নাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তার একটি মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। ওই ভিডিওতে তিনি ‘কাড়ি কাড়ি টাকা দিয়ে আদালত ও জামিন কেনা যায়’—এমন বক্তব্য দিয়ে আইন ও নিরাপত্তা সংস্থাকে কটাক্ষ করেন।
ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর বিষয়টি দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয় এবং এর পরপরই রাজধানী ঢাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ ছোট সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে।
চলতি বছরের ১৫ মার্চ রাজধানী ঢাকা থেকে ছোট সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের মো. জামালের ছেলে। নগরীর বায়েজিদ, অক্সিজেন ও চান্দগাঁও থানা এলাকায় তিনি ‘ছোট সাজ্জাদ’ নামে পরিচিত ছিলেন।
এক সময় তাকে ধরিয়ে দিতে পুলিশ পুরস্কারও ঘোষণা করেছিল। দীর্ঘদিন ধরে তিনি চট্টগ্রামের অপরাধ জগতের প্রভাবশালী চরিত্র হিসেবে পরিচিত ছিলেন বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে।
একাধিক হত্যা মামলায় ধারাবাহিকভাবে জামিন পাওয়ায় পুলিশের মধ্যেও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এমন একজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর মুক্তি জননিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল কবির জানান, সাজ্জাদকে দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। এসব আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তিনি কারাগারেই থাকবেন।
চট্টগ্রাম আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী বলেন, গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন দুটি বর্তমানে আদালতের বিবেচনায় রয়েছে। বিধি অনুযায়ী, আসামির উপস্থিতিতে এসব আবেদনের শুনানি গ্রহণ করতে হয়। তবে আসামিরা বিভিন্ন কারাগারে আটক থাকায় অনলাইনের মাধ্যমে শুনানি নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
সাতটি হত্যা মামলায় জামিন পাওয়ার ঘটনা ছোট সাজ্জাদের জন্য আইনি দিক থেকে বড় সাফল্য হলেও বাস্তবতায় তার মুক্তি এখনও অনিশ্চিত। একাধিক মামলার জটিলতা, নতুন করে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন এবং পুলিশের কড়া অবস্থানের কারণে তিনি আপাতত কারাগারেই থাকছেন।
Leave a comment