রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও সম্ভাব্য স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি এসেছে। এ ঘটনার প্রধান আসামি হিসেবে চিহ্নিত ফয়সল করিম মাসুদের বোনের বাসার পাশ থেকে দুটি ম্যাগাজিন ও ১১টি গুলি উদ্ধার করেছে র্যাব।
র্যাব-২ জানায়, রাজধানীর আগারগাঁওয়ের কর্নেল গলিতে পরিচালিত এক বিশেষ অভিযানে দুটি ভরা ম্যাগাজিন, ১১টি তাজা গুলি এবং একটি ধারালো চাকু উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে র্যাবের গণমাধ্যম শাখা থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গোপন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এবং আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অভিযান পরিচালনা করা হয়। উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও গুলি পাওয়া গেছে ফয়সল করিমের বোনের বাসার পাশের একটি ভবনের ফাঁকা স্থান থেকে, যা ঘটনাটির সঙ্গে সরাসরি যোগসূত্রের ইঙ্গিত দেয়।
অভিযানের সময় শুধু অস্ত্রই নয়, বরং সম্ভাব্য অপরাধ পরিকল্পনার সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল ও আর্থিক আলামতও উদ্ধার করা হয়েছে। র্যাব জানায়, ফয়সল করিমের বোনের বাসা থেকে একটি ট্যাবলেট, একটি অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন, একটি পুরনো বাটন মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
এ ছাড়া দুটি জাতীয় পরিচয়পত্র, বিভিন্ন ব্যাংকের মোট ১৫টি চেক বই, ছয়টি পাসপোর্ট এবং একাধিক ব্যাংকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৩৮টি চেক উদ্ধার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা, এসব নথি আর্থিক লেনদেন, যাতায়াত কিংবা অপরাধ পরিকল্পনার প্রমাণ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
র্যাবের ভাষ্য অনুযায়ী, আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনায় ঘটনাদিনের আগে ও পরে সন্দেহজনক কিছু গতিবিধি ধরা পড়েছে। ফুটেজে দেখা যায়, ঘটনার দিন বেলা আনুমানিক ১১টার দিকে ফয়সল করিম মাসুদ ও তার সহযোগী আলমগীর মোটরসাইকেলে করে বাসা থেকে বের হন।
পরবর্তীতে বিকেল প্রায় ৪টার দিকে ফয়সল, আলমগীর এবং ফয়সলের মা ও ভাগিনাকে দুটি ভবনের মাঝখানের ফাঁকা জায়গা থেকে কিছু জিনিস বের করতে দেখা যায়। র্যাব কর্মকর্তাদের মতে, উদ্ধার হওয়া অস্ত্র ও গুলি ওই সময় সেখানে লুকানো বা স্থানান্তর করা হয়ে থাকতে পারে।
ফুটেজে আরও দেখা যায়, বিকেল ৪টা ২০ মিনিটের দিকে ফয়সল ও আলমগীর একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে ওই এলাকা ত্যাগ করেন। এসব দৃশ্য তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকায় চলন্ত একটি মোটরসাইকেল থেকে রিকশায় থাকা শরীফ ওসমান হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। ঘটনাটি প্রকাশ্যে সংঘটিত হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
ওসমান হাদি ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক হিসেবে পরিচিত এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচার কার্যক্রম চালাচ্ছিলেন। নির্বাচনী তৎপরতার মধ্যেই এ হামলার ঘটনা রাজনৈতিক সহিংসতা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
Leave a comment