Home আন্তর্জাতিক পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমে সেনা অভিযান: ১৩ সন্ত্রাসী নিহত
আন্তর্জাতিক

পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমে সেনা অভিযান: ১৩ সন্ত্রাসী নিহত

Share
Share

পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়ার বান্নু ও মোহমান্দ জেলায় পরিচালিত পৃথক দুইটি সেনা অভিযানে মোট ১৩ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আন্তঃবিভাগীয় জনসংযোগ দপ্তর (আইএসপিআর) রোববার এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। নিহত সবাই নিষিদ্ধ কট্টর ইসলামপন্থি গোষ্ঠী তেহরিক-ই তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) এবং তাদের মিত্র সংগঠনের সদস্য বলে সামরিক কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে ।

আইএসপিআরের বিবৃতিতে বলা হয়, নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই দুই জেলায় লক্ষ্যভিত্তিক অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানের সময় মোহমান্দ জেলায় সাতজন এবং বান্নুতে ছয়জন সন্ত্রাসী নিহত হয়। বিবৃতিতে নিহতদের ‘ফিৎনা আল-খারিজি’ এবং ‘ভারত-সমর্থিত সন্ত্রাসী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে—যা সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর বিবৃতিতে ব্যবহৃত একটি পরিভাষা।

আইএসপিআর জানায়, “গোপন সামরিক তথ্যের ভিত্তিতে বান্নু এবং মোহমান্দ জেলায় পৃথক অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযানে পাকিস্তানি সেনারা সফলভাবে সন্ত্রাসীদের অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালায় এবং তাদের নিষ্ক্রিয় করে।” একই সঙ্গে জানানো হয়, উভয় এলাকায় অভিযান এখনো চলমান রয়েছে এবং প্রয়োজনে আরও অভিযান পরিচালিত হবে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যদি এসব এলাকায় আরও ‘ভারত-সমর্থিত ফিৎনা আল-খারিজি সন্ত্রাসী’ শনাক্ত হয়, তবে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেনাবাহিনীর ভাষ্য অনুযায়ী, অভিযানের লক্ষ্য ছিল সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সক্রিয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সক্ষমতা ভেঙে দেওয়া এবং ভবিষ্যৎ হামলার আশঙ্কা নস্যাৎ করা।

পাকিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান সরকার প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশটির সীমান্তবর্তী প্রদেশগুলোতে সন্ত্রাসী তৎপরতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে খাইবার পাখতুনখোয়া ও বেলুচিস্তানে হামলা, নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর আক্রমণ এবং বেসামরিক স্থাপনায় সহিংসতার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে।

খাইবার পাখতুনখোয়া দীর্ঘদিন ধরেই তেহরিক-ই তালেবান পাকিস্তানের অন্যতম শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। আফগানিস্তান সীমান্তঘেঁষা এই অঞ্চলে টিটিপির উপস্থিতি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হয়। অন্যদিকে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বেলুচিস্তানে সক্রিয় রয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন বালোচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ), যা পাকিস্তানে নিষিদ্ধ। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, এই দুটি গোষ্ঠীর সমান্তরাল তৎপরতা দেশের নিরাপত্তা কাঠামোর ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে।

ইসলামাবাদভিত্তিক থিংকট্যাংক সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ (সিআরএসএস) প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মাত্র তিন মাসে পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদ-সংশ্লিষ্ট সহিংসতার হার আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় ৪৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবেদনে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা, লক্ষ্যভিত্তিক হত্যাকাণ্ড এবং বিস্ফোরণের সংখ্যা বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করা হয়।

পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে যে আফগানিস্তানের তালেবান সরকার টিটিপিকে আশ্রয়, প্রশ্রয় এবং অস্ত্র-রসদের জোগান দিচ্ছে। ইসলামাবাদের দাবি, আফগান ভূখণ্ড ব্যবহার করেই টিটিপি পাকিস্তানের ভেতরে হামলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করছে। তবে আফগানিস্তানের তালেবান সরকার এ অভিযোগ ধারাবাহিকভাবে প্রত্যাখ্যান করে আসছে।

সম্প্রতি কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত আফগানিস্তানের ইসলামি চিন্তাবিদদের এক বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা জানান, তারা চান না যে আফগানিস্তানের ভূখণ্ড অন্য কোনো দেশের ক্ষতির জন্য ব্যবহৃত হোক। বৈঠকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, সীমান্ত নিরাপত্তা এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তাহির হুসেইন আন্দারবি এক বিবৃতিতে এই বৈঠককে স্বাগত জানান। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, তালেবান গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে এমন প্রতিশ্রুতি এর আগেও একাধিকবার দেওয়া হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে পাকিস্তান তার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সহিংসতার ধারাবাহিকতা দেখেছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সামরিক অভিযানগুলো একদিকে যেমন সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ককে চাপের মুখে ফেলছে, অন্যদিকে আঞ্চলিক কূটনীতির জটিলতাও বাড়াচ্ছে। আফগানিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, গোয়েন্দা সহযোগিতা এবং রাজনৈতিক সংলাপ—এই তিনটি ক্ষেত্রেই সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা অর্জন কঠিন হবে বলে মনে করছেন তারা।

আইএসপিআর জানিয়েছে, দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনী সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার এবং গোয়েন্দা তথ্যভিত্তিক অভিযানে আরও গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানিয়েছে।
সূত্র: জিও নিউজ

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

মিয়ানমারের হাসপাতালে বিমান হামলা: নিহত কমপক্ষে ৩১

বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে একটি হাসপাতালে সামরিক জান্তার বিমান হামলায় কমপক্ষে ৩১ জন নিহত এবং ৬৮ জন আহত হয়েছেন। বুধবার সন্ধ্যায় এমরাউক-উ...

মালয়েশিয়ায় দুই অভিযানে ৪৭ বাংলাদেশি আটক

মালয়েশিয়ার তেরেঙ্গানু রাজ্যে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত দুটি পৃথক অভিযানে বাংলাদেশিসহ ৫৬ জনকে আটক করেছে দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ। আটককৃতদের মধ্যে ৪৭ জন বাংলাদেশি,...

Related Articles

মহান বিজয় দিবস আজ: স্বাধীনতার গৌরব ও আত্মত্যাগের চিরস্মরণীয় দিন

আজ ১৬ ডিসেম্বর—বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী...

হাদী গুলিবিদ্ধের ঘটনা: শেরপুরের বারোমারি সীমান্ত থেকে ২ জন আটক

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদী গুলিবিদ্ধের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের সীমান্ত...

বিজয় দিবসে জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক নবযাত্রা রক্ষার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর...

গুলিবিদ্ধ ওসমান হাদি সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি, রাষ্ট্র বহন করবে চিকিৎসা ব্যয়

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র এবং ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে...