যুক্তরাষ্ট্রে আবারও বন্দুক সহিংসতার ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। রোড আইল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের প্রখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বন্দুকধারীর গুলিতে অন্তত দুইজন নিহত এবং আটজন গুরুতর আহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। হামলার সময় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চূড়ান্ত পরীক্ষা চলছিল, ফলে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক—উভয়ের মধ্যেই দ্রুত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বিকাল ৪টা ৫ মিনিটের দিকে জরুরি সেবা নম্বর ৯১১-এ প্রথম ফোন আসে। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। রোড আইল্যান্ডের মেয়র ব্রেট স্মাইলি এক সংবাদ সম্মেলনে হতাহতের তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, “প্রাথমিকভাবে আমরা দুইজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করতে পেরেছি এবং আটজন গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।” তিনি আরও জানান, আহত ও নিহতের সংখ্যা পরিবর্তিত হতে পারে।
হামলার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিকাল ৪টা ২২ মিনিটে একটি জরুরি সতর্কবার্তা জারি করে। ওই বার্তায় জানানো হয়,
ক্যাম্পাসের বারুস ও হোলে ইঞ্জিনিয়ারিং ও ফিজিক্স ভবনের আশপাশে একটি ‘সক্রিয় বন্দুকধারী’ অবস্থান করছে। শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ কক্ষের দরজা বন্ধ রাখতে, আলো নিভিয়ে রাখতে, মোবাইল ফোন সাইলেন্ট মোডে রাখতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ স্থানে লুকিয়ে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এই সতর্কবার্তার পর পুরো ক্যাম্পাস কার্যত লকডাউনের আওতায় চলে যায়। ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করা হয়, বন্ধ করে দেওয়া হয় অভ্যন্তরীণ যান চলাচল। শিক্ষার্থী ও কর্মীদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে বিশেষ নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করে পুলিশ।
তবে ব্যাপক তল্লাশি চালিয়েও পুলিশ সংশ্লিষ্ট ভবনগুলোতে কোনো বন্দুকধারীকে খুঁজে পায়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, হামলাকারী কীভাবে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছে এবং গুলি চালানোর পর কীভাবে সেখান থেকে বেরিয়ে গেছে—তা এখনো স্পষ্ট নয়। ঘটনাস্থল বা আশপাশ থেকে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা যায়নি।
মেয়র ব্রেট স্মাইলি জানান, সন্দেহভাজন হামলকারী কালো পোশাক পরিহিত ছিলেন এবং গুলিবর্ষণের পর পায়ে হেঁটে এলাকা ত্যাগ করেন। তবে তদন্তের স্বার্থে তার পরিচয় বা সম্ভাব্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। “ঘটনাটি অত্যন্ত সংবেদনশীল। আমরা সব দিক খতিয়ে দেখছি।
হামলার কিছুক্ষণ পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে একটি খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে যে হামলাকারীকে আটক করা হয়েছে। তবে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে এ তথ্য নিশ্চিত করেনি। ফলে হামলাকারী গ্রেপ্তার হয়েছে কি না—এ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও প্রথমদিকে এক বক্তব্যে বন্দুকধারী আটক হয়েছে বলে ইঙ্গিত দিলেও পরবর্তীতে সেই বক্তব্য থেকে সরে আসেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জনগণকে গুজবে কান না দিয়ে কেবলমাত্র আনুষ্ঠানিক ঘোষণার ওপর নির্ভর করার আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে, এই হামলা যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্দুক সহিংসতা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একের পর এক হামলার ঘটনা দেশটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন নিয়ে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ক্যাম্পাস নিরাপত্তা জোরদার এবং আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছেন।
ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে বলেছে, আহতদের চিকিৎসা ও মানসিক সহায়তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ক্যাম্পাসে কাউন্সেলিং সেবা চালু করা হয়েছে, যাতে শিক্ষার্থী ও কর্মীরা এই ট্রমা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা পান।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাটি তদন্তে ফেডারেল সংস্থাগুলোর সহায়তাও নেওয়া হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, সিসিটিভি ফুটেজ এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত প্রমাণ বিশ্লেষণ করে হামলাকারীকে শনাক্ত ও আটক করার চেষ্টা চলছে।
আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক সহিংসতা এখনো একটি বড় সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকট। তদন্তের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে নতুন তথ্য প্রকাশ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
সূত্র: আলজাজিরা
Leave a comment