ফিলিস্তিনের গাজা অঞ্চলে যুদ্ধবিরতির মধ্যেও ফের ইসরাইলি হামলার ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে অন্তত পাঁচ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন সাংবাদিক ও একটি শিশু রয়েছে। এছাড়া আরও ১৫ জন আহত হয়েছেন।
মার্কিন মধ্যস্থতায় ঘোষিত যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকা সত্ত্বেও ইসরাইল ট্যাংক ও ড্রোন থেকে একের পর এক হামলা চালাচ্ছে। এতে বারবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘিত হচ্ছে, বাড়ছে হতাহত ও ধ্বংসযজ্ঞ। এই তথ্য নিশ্চিত করেছে টিআরটি ওয়ার্ল্ড।
গাজার চিকিৎসা সূত্র জানায়, গাজা সিটির আল-তুফাহ এলাকায় ইসরাইলি গোলাবর্ষণে দুইজন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে একটি শিশু রয়েছে। আহতদের মধ্যে ১৫ জনকে আল-আহলি ব্যাপ্টিস্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। একই সঙ্গে পূর্ব গাজা সিটির জায়তুন এলাকায় আরেকজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
পরে খান ইউনিসের কেন্দ্রীয় এলাকায় ইসরাইলি হামলায় ফটোসাংবাদিক মাহমুদ ওয়াদি নিহত হন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী নিরাপদ এলাকায় কাজ করছিলেন। ওয়াদির বাবা ইসসাম অভিযোগ করেছেন, “মাহমুদ নিরাপদ এলাকায় ছবি তুলছিল, কিন্তু ইসরাইল কোনো অঙ্গীকার বা প্রতিশ্রুতি পূরণ করে না।”
গাজা সিটির কেন্দ্রীয় অংশের আল-দারাজ স্কুলেও ইসরাইলি গোলাবর্ষণ হয়, যেখানে বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। হামলায় নারীসহ ১৭ জন আহত হন। গাজা সিভিল ডিফেন্স জানায়, আল-তুফাহ এলাকায় আরও পাঁচজন আহত হয়েছেন এবং ইউনাইটেড নেশনস ওসা’র সহায়তায় উদ্ধারকর্মীরা আটকে পড়া বহু মানুষকে সরিয়ে এনেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, উত্তরের বেইত লাহিয়া এলাকায় ইসরাইলি বাহিনী বহু ভবন ও স্থাপনা ধ্বংস করেছে। এই এলাকা এখনও ইসরাইলি সামরিক নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। গাজা সিটি, খান ইউনিস ও রাফাহ এখনও হামলার প্রধান লক্ষ্যবস্তু।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরাইলি হামলায় অন্তত ৩৫৬ জন নিহত ও ৯০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইলের হামলায় ৭০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন আরও এক লাখ ৭১ হাজারেরও বেশি মানুষ।
গাজা গভর্নমেন্ট মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, মাহমুদ ওয়াদি নিহত হওয়ার পর গাজায় সাংবাদিকদের মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ২৫৭ জনে দাঁড়িয়েছে। তারা অভিযোগ করেছেন, ইসরাইল ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের ওপর ‘টার্গেটেড হামলা ও হত্যাকাণ্ড’ চালাচ্ছে।
সংঘর্ষবিরতির লঙ্ঘন এবং সাংবাদিক ও শিশুসহ সাধারণ নাগরিকদের মৃত্যু আন্তর্জাতিকভাবে উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া সতর্ক করে দিয়েছে, এ ধরনের হামলা মানবিক আইন লঙ্ঘন করে এবং অস্থিরতা বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
Leave a comment