ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপজুড়ে টানা বর্ষণে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যা ও ধারাবাহিক ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫০২ জনে দাঁড়িয়েছে। দেশজুড়ে এখনো ৫০০-র বেশি মানুষ নিখোঁজ, এবং লাখো বাসিন্দা আশ্রয়হীন হয়ে পড়ায় পরিস্থিতি দ্রুত গুরুতর হয়ে উঠছে।
উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় আচেহ প্রদেশে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। এখানেই অন্তত ৫৪ জন মারা গেছেন এবং ৫০ হাজারেরও বেশি পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
৪০ বছর বয়সী স্থানীয় নারী ফিত্রিয়াতি নিজের বিধ্বস্ত বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে বলেন,“এত ভয়াবহ বন্যা জীবনে দেখিনি। আগের বন্যায় পানি উঠত, কিন্তু এবার ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে, মানুষ মারা গেছে—অবিশ্বাস্য।” রাতে হঠাৎ নদীর গর্জন শুনে ঘুম ভেঙে যায় তার। পরিবারকে নিয়ে ঘর ছেড়ে বের হতে পেরেছিলেন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই তীব্র স্রোতে ঘর ধসে পড়ে।
বহু বাসিন্দার কাছে এই বন্যা ২০০৪ সালের সুনামির ভয়াবহতা আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছে, যা আচেহতে ১ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। উত্তর আচেহর ৪১ বছর বয়সী মৌলিদিন বলেন,“সেদিন আমরা শুধু পালানোর কথা ভাবছিলাম। আতঙ্কটা যেন সুনামি দিনের মতোই।”
পশ্চিম সুমাত্রায় অন্তত ৯০ জন মারা গেছে। স্থানীয় বাসিন্দা আফ্রিয়ান্তি উস্নিয়া জানান “পানি যেন বড় ঢেউয়ের মতো আমাদের ওপর এসে পড়েছিল। ঘর, জিনিসপত্র সব হারিয়ে ফেলেছি।”
তিনি অভিযোগ করেন, বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সরকারি ত্রাণ পাননি। সামরিক বাহিনী বিমান ও যুদ্ধজাহাজ দিয়ে জরুরি ত্রাণ পরিবহন করছে। তবু উদ্ধারকাজ ধীরগতির।
এদিকে, বিলম্বিত ত্রাণের সুযোগ নিয়ে কিছু এলাকায় লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। উত্তর সুমাত্রার সিবোলগায় একটি দোকান লুট হওয়ার ঘটনা ঘটেছে ।
পরিবেশমন্ত্রী হানিফ ফাইসোল নুরোফিক বলেন,“এটি আমাদের জানিয়ে দিচ্ছে যে দেশের আবহাওয়া আর পূর্বাভাসযোগ্য নয়। পরিবেশ সুরক্ষা ও টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনা এখন জরুরি।”
আচেহর গভর্নর মুজাকির মানাফ জানান,“অনেক গ্রাম এখনো পানির নিচে ও পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। পরিস্থিতি সংকটজনক। এটি যেন আচেহর জন্য দ্বিতীয় সুনামির মতো।” উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন, সেতু ভেঙে পড়া, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া, কাদা–মাটি জমে রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে বহু এলাকায় এখনো পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।
Leave a comment