ভারতের মহারাষ্ট্র প্রদেশের নানদেড়ে ঘটে যাওয়া নির্মম এক হত্যাকাণ্ড ও তার পরবর্তী ঘটনা সমগ্র দেশকে নাড়া দিয়েছে। ২০ বছর বয়সী সক্ষম টাটেকে পিটিয়ে, গুলি করে এবং পাথর দিয়ে থেঁতলে হত্যা করা হয়। অভিযোগ উঠেছে—এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন তার প্রেমিকা আঁচলের পরিবারের সদস্যরা।
পুলিশ সূত্র জানায়, সক্ষম ও আঁচলের প্রেম দীর্ঘদিনের। কিন্তু দুই পরিবারের পক্ষ থেকেই সম্পর্কটি মেনে নেওয়া হয়নি। বিশেষ করে জাতিগত ভিন্নতা ও সামাজিক অবস্থানের কারণে সম্পর্কটি তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়ে। পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার হুমকি সত্ত্বেও তরুণ-তরুণী সম্পর্ক বজায় রাখেন। এই অবস্থায় গত সপ্তাহে আঁচলের বাবা ও ভাই পরিকল্পিতভাবে সক্ষমকে খুঁজে বের করেন এবং নির্মমভাবে হত্যা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
হত্যাকাণ্ডের পর যখন সক্ষম টাটের শেষকৃত্যের আয়োজন চলছিল, তখন সেখানে ঘটে আরো এক বিস্ময়কর ঘটনা। শোকাহত প্রেমিকা আঁচল সবার সামনে মৃতদেহের পাশে দাঁড়িয়ে নিজেকে সক্ষমের স্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করেন। তিনি সক্ষমের দেহে হলুদ মাখান, নিজের কপালে সিঁদুর পরেন এবং স্থানীয় রীতিনীতি অনুসরণ করে ‘বিয়ের’ আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। আঁচল দৃঢ় কণ্ঠে বলেন যে জীবনের বাকি সময় তিনি সক্ষমের পরিবারের সঙ্গে থাকবেন।
আঁচল সাংবাদিকদের বলেন,“আমাদের প্রেম জিতেছে। সক্ষম মারা গেলেও আমাদের সম্পর্ক বেঁচে আছে। আমার বাবা ও ভাইরা হেরেছে।”
তার এই অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত এবং দৃঢ় অবস্থান ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ ভারতের নানা প্রান্তে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
আঁচল দৃঢ়ভাবে বলেন, তিনি হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা চান। তাঁর অভিযোগ, পরিবার শুরু থেকেই তাদের সম্পর্ক মেনে নেয়নি এবং ভয় দেখিয়ে সম্পর্ক ভাঙার চেষ্টা করেছিল। শেষ পর্যন্ত সেই বিরোধই প্রাণ কেড়ে নেয় সক্ষম টাটের। মহারাষ্ট্র পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় একাধিকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডটি “জাতিগত পক্ষপাত ও অনার-ভিত্তিক সহিংসতা” হিসেবে তদন্ত করা হচ্ছে।
ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে আন্তঃজাত বা আন্তঃসম্প্রদায় প্রেম ও বিবাহকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনা বাড়ছে বলে মানবাধিকার সংস্থাগুলো জানিয়েছে। পরিবার বা সমাজের মান-সম্মান রক্ষার নামে তরুণ-তরুণীদের ওপর হামলা, হুমকি এমনকি হত্যাকাণ্ডও ঘটছে—যা “অনার কিলিং” নামে পরিচিত।
নানদেড়ে সক্ষম টাটে হত্যাকাণ্ডও তারই ভয়াবহ উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। স্থানীয় অধিকারকর্মীরা বলছেন, এ ধরনের অপরাধ রোধে আরও কঠোর আইন প্রয়োগ, সামাজিক সচেতনতা ও পরিবারের মানসিকতা পরিবর্তন অপরিহার্য। একদিকে নির্মম হত্যাকাণ্ড, অন্যদিকে প্রেমিকার অপ্রতিরোধ্য প্রতিবাদ—এই দুই বিপরীতে গড়া ঘটনাপ্রবাহ পুরো দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। সক্ষম টাটে হত্যা মামলার তদন্ত চলছে, এবং দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে আঁচলের বক্তব্য— “সক্ষম নেই, কিন্তু আমাদের প্রেম বেঁচে আছে।”
Leave a comment