ঘূর্ণিঝড় ডিটওয়ার–এর প্রভাবে সৃষ্ট টানা বৃষ্টি, আকস্মিক বন্যা এবং একের পর এক ভূমিধসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র (ডিএমসি) জানিয়েছে, প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ১৫৩-এ দাঁড়িয়েছে এবং এখনো অন্তত ১৯১ জন মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। ভয়াবহ এই সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাঁচ লক্ষেরও বেশি মানুষ, আর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সারা দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে।
গত এক সপ্তাহ ধরে ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রটিতে ভারি বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাওয়ায় সরকার আন্তর্জাতিক মহলের কাছে জরুরি সহায়তার আবেদন জানিয়েছে।
ডিএমসি জানায়, বন্যায় ২০ হাজারের বেশি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত বা আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে অন্তত ১ লাখ ৮ হাজার মানুষকে বিভিন্ন অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে হয়েছে।
সংস্থাটির মুখপাত্র প্রদীপ কডিপিল্লি জানান, “যারা সাময়িকভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, তাদের মধ্যে আরও প্রায় ৭ লাখ ৯৮ হাজার মানুষের সহায়তা প্রয়োজন। আমরা অবিরত উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা পরিচালনা করছি।”
শ্রীলঙ্কা পুলিশ জানায়, নিহতদের মধ্যে কুরুনেগালা জেলার একটি বন্যাকবলিত বৃদ্ধাশ্রমের ১১ জন বাসিন্দা রয়েছেন। শনিবার বিকেলে হঠাৎ পানি বাড়তে থাকায় বৃদ্ধাশ্রমটি সম্পূর্ণ ডুবে যায়। সময়মতো তাদের সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি।
উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে দেশটির সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। নৌকাযোগে পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধার, খাদ্য ও ওষুধ বিতরণ এবং নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। বহু স্থানে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় উদ্ধারকাজ আরও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মালওয়ানায় আশ্রয় নেওয়া মল্লিকা কুমারী চোখ ভরা আতঙ্ক নিয়ে ঘটনার ভয়াবহতা বর্ণনা করেন । তার বাড়িটি শুক্রবারের বন্যায় ছাদ পর্যন্ত ডুবে গিয়েছিল। তিন সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে একটি ভাড়া করা লরিতে রাত কাটাতে বাধ্য হন তারা।
তিনি জানান, “টিভিতে বন্যার সতর্কতা দেখেছিলাম। কিন্তু কখনো ভাবিনি নদী এত দ্রুত উপচে উঠবে। আমরা কিছুই নিতে পারিনি, এমনকি নাস্তাও খাইনি। দুই ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ওষুধ আনতে হবে। কাপড় সংগ্রহ করতে আবর্জনার ব্যাগ এনেছি।”
তাড়াহুড়োর মধ্যে তিনি তার পোষা বিড়ালটিকেও ফেলে এসেছিলেন। পরে নৌবাহিনীর সদস্যরা সেটিকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেন।
কলম্বো এবং আশপাশের নিম্নাঞ্চলে অধিকাংশ ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ কেউ তাদের ঘরের ভেতরের সামগ্রী রক্ষায় ওপরতলায় আশ্রয় নিচ্ছেন।
জলমগ্ন হয়ে পড়েছে ফার্মেসি, সুপারমার্কেট, পোশাকের দোকানসহ আশপাশের প্রায় সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এতে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। শ্রীলঙ্কার আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সপ্তাহান্তেও ভারি বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। এতে ইতিমধ্যেই প্লাবিত অঞ্চলগুলোর বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাবে।
দেশটির পুরো মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে বন্যা–ভূমিধসের ঝুঁকি এখনো চরমে। পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গেলে মৃত্যুহার এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন।
Leave a comment