মাত্র ১০ ও ১৬ মাসে সম্পূর্ণ পবিত্র কোরআন হিফজ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ঝিনাইদহের আল-কলম হিফয মাদ্রাসার দুই মেধাবী শিক্ষার্থী। তাদের এই অসাধারণ সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে—এই দুই শিক্ষার্থীকে পবিত্র ওমরাহ হজে পাঠানো হবে।
এই দুই গর্বিত শিক্ষার্থীর নাম মিয়া মোহাম্মদ মোস্তফা ও তানভীর মাহমুদ ইফাদ। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সকালে ঝিনাইদহ শহরের আল-কলম হিফয মাদ্রাসায় এক বর্ণাঢ্য আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় সনদ ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল, এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন আল-কলম ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ মুহাম্মদ সাইদুর রহমান।
অনুষ্ঠানে বক্তারা শিক্ষার্থীদের সাফল্যে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “এই বয়সে এত কম সময়ে সম্পূর্ণ কোরআন হিফজ করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। এটি তাদের আন্তরিকতা ও আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহেরই ফল।”
আলোচনা সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল বলেন,“ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী শুধু কোরআন মুখস্থ করেন না, বরং চরিত্র, শৃঙ্খলা ও মানবিক মূল্যবোধে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠেন। আজ যারা হিফজ সম্পন্ন করেছেন, তারা আমাদের সমাজের সম্পদ।”
আল-কলম ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ মুহাম্মদ সাইদুর রহমান ঘোষণা দেন,“আমাদের প্রতিষ্ঠান সবসময় মেধা, অধ্যবসায় ও নৈতিকতার মূল্যায়ন করে। মোস্তফা ও ইফাদের এই অর্জন আমাদের গর্বিত করেছে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি—তাদের ওমরাহ হজে পাঠিয়ে সম্মান জানানো হবে।”
তিনি আরও বলেন,“এই উদ্যোগ অন্যান্য শিক্ষার্থীদেরও অনুপ্রেরণা জোগাবে। ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে নৈতিক সমাজ গঠনে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।” সাধারণত একজন শিক্ষার্থীর পক্ষে পবিত্র কোরআন সম্পূর্ণ মুখস্থ করতে তিন থেকে চার বছর সময় লাগে। কিন্তু মিয়া মোহাম্মদ মোস্তফা মাত্র ১০ মাসে এবং তানভীর মাহমুদ ইফাদ ১৬ মাসে হিফজ সম্পন্ন করে রেকর্ড গড়েছেন।
তাদের শিক্ষকরা জানান, দুজনেই নিয়মিত অধ্যয়ন, সময়ানুবর্তিতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এই অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ আয়াত মুখস্থের পাশাপাশি পুরোনো অংশের পুনরাবৃত্তি অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে করত।
মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ কায়সার মাহমুদ বলেন,“তাদের দৃঢ় মনোবল ও একাগ্রতা আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। এই বয়সে এত বড় অর্জন তাদের জীবনে আরও অনেক বড় সাফল্যের পথ তৈরি করবে।” সনদ গ্রহণের সময় দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবকরাও আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। মিয়া মোহাম্মদ মোস্তফার পিতা বলেন,“ছোটবেলা থেকেই ছেলের কোরআন শেখার প্রতি আগ্রহ ছিল। আজ সে আল্লাহর সাহায্যে তার স্বপ্ন পূরণ করেছে। আল-কলম মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।”
তানভীর মাহমুদ ইফাদের মা বলেন,“আমার সন্তান যেন শুধু কোরআনের হাফেজ নয়, একজন আদর্শ মানুষ হয়—এই দোয়া করছি। ওমরাহ হজে পাঠানোর উদ্যোগ আমাদের পরিবারকে সম্মানিত করেছে।”
মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামি কয়েক মাসের মধ্যেই দুই শিক্ষার্থীকে সৌদি আরবে ওমরাহ পালনে পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তাদের সঙ্গে থাকবেন একজন শিক্ষক ও অভিভাবক প্রতিনিধি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথি, শিক্ষক ও অভিভাবকরা একমত হয়ে বলেন, এই দুই শিক্ষার্থীর সাফল্য অন্যান্য হিফজ শিক্ষার্থীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক মূল্যবোধ, শৃঙ্খলা ও মানবিকতার চর্চা করলে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
Leave a comment