গাজীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে মারুফ (২২) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন তার বন্ধু জামিল (২৪)। সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানার কুনিয়া তারগাছ এলাকায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। নিহত মারুফ ওই এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। আহত জামিল একই এলাকার মো. আতাউল্লাহর ছেলে এবং স্থানীয় একটি সিগারেট কোম্পানিতে কর্মরত ছিল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সন্ধ্যায় জামিল বকেয়া বিল সংগ্রহের জন্য কুনিয়া তারগাছ বেলাল নগর সড়কের আক্তার হোসেনের বাড়ির সামনে অবস্থিত একটি দোকানে যান। সেখানে কয়েকজন কিশোর আড্ডা দিচ্ছিল, যাদের মধ্যে রবি নামে এক কিশোরের হাতে ধারালো ছুরি ছিল।
জামিল বিষয়টি দেখে আপত্তি জানালে রবি ক্ষিপ্ত হয়ে তার ওপর হামলা চালায়। জামিলের আর্তচিৎকার শুনে তার বন্ধু মারুফ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে বাঁচাতে এগিয়ে যান। তখন গ্যাংয়ের অন্যান্য সদস্যরা মারুফের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে একাধিকবার ছুরিকাঘাত করে। রক্তাক্ত অবস্থায় স্থানীয়রা দু’জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে চিকিৎসকরা মারুফকে মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত জামিল বর্তমানে স্থানীয় বড়বাড়ি ইসলামিয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
আহত জামিল পুলিশকে দেওয়া জবানবন্দিতে জানান, রবি, রনি, সাগর, সাব্বিরসহ ৮-১০ জনের একটি সংঘবদ্ধ কিশোর গ্যাং দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় সক্রিয়। তারা স্থানীয় তরুণদের ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছে। আর যারা প্রতিবাদ করে তাদের হুমকি দেয়। আজ শুধু প্রতিবাদ করাতেই ওরা আমার বন্ধুকে মেরে ফেলেছে।”
গাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, “ খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করতে অভিযান শুরু হয়েছে। এলাকার কয়েকজন সন্দেহভাজনকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার বা ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। আমরা ইতিমধ্যে তথ্য সংগ্রহ করছি, শিগগিরই দায়ীদের আইনের আওতায় আনা হবে।”
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কিশোর গ্যাং কার্যক্রম উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুর মহানগরীতে অন্তত ১৫টির বেশি সক্রিয় কিশোর গ্যাং রয়েছে।
সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, পরিবারে অনিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতা, মাদকাসক্তি, এবং সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এসব অপরাধমূলক প্রবণতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। অপরাধ দমনের পাশাপাশি পরিবার ও সমাজকে সচেতন ভূমিকা নিতে হবে।
Leave a comment