ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলায় মানসিক প্রতিবন্ধী শ্বশুরের বটির কোপে পুত্রবধূ লিমা খাতুন (২৫) নিহত হয়েছেন। রোববার (২৬ অক্টোবর) ভোররাতে উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামে এ হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে। নিহত লিমা খাতুন ওই গ্রামের আব্দুর রউফের স্ত্রী। তার দুইটি ছোট সন্তান রয়েছে।
শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুম খান বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “ভোর রাতে মানসিক প্রতিবন্ধী শ্বশুরের হাতে পুত্রবধূ নিহত হয়েছেন। আমরা ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয়দের বরাতে জানা গেছে, ভোররাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘর থেকে বের হন লিমা খাতুন। সেই সময় হঠাৎ তার শ্বশুর মুকুল শেখ একটি ধারালো বটি দিয়ে তাকে আঘাত করেন। বটির আঘাতে গুরুতর জখম হন লিমা। তার চিৎকার শুনে পরিবারের অন্য সদস্যরা বাইরে এসে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক আরিফুর রহমান লিমাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি জানান, “রক্তক্ষরণ এতটাই বেশি হয়েছিল যে হাসপাতালে আনার আগেই লিমা খাতুনের মৃত্যু হয়।”
নিহতের শাশুড়ি জানান, “ভোর সাড়ে চারটার দিকে আমার বউমা নামাজ পড়ার জন্য উঠেছিল। আমি তখনও নামাজের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হঠাৎ বাইরে থেকে চিৎকার শুনে দৌড়ে যাই, দেখি বউমা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাই, কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমার স্বামী মানসিকভাবে অসুস্থ। কখন কী করে ফেলে, কেউ বুঝে উঠতে পারে না। তার হাতের বটির আঘাতেই প্রাণ গেল আমার বউমার।”
শৈলকুপা থানার ওসি মাসুম খান বলেন, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে। আমরা ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছি। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।” তিনি আরও জানান, “পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসঙ্গে মানসিক প্রতিবন্ধী অভিযুক্তকে হেফাজতে নিয়ে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।”
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিবারে যদি কোনো সদস্য মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন, তবে তার পর্যবেক্ষণ, ওষুধ গ্রহণ, এবং নিরাপদ পরিবেশে রাখার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। এতে অপ্রত্যাশিত পারিবারিক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ সম্ভব।
Leave a comment