গাইবান্ধা সদর উপজেলার কুপতলা ইউনিয়নের স্কুলের বাজার এলাকায় এক হৃদয়বিদারক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। পরকীয়ার জেরে স্বামীকে খুনের অভিযোগ উঠেছে স্ত্রী ও তার প্রেমিকের বিরুদ্ধে। ঘটনা গোপন রাখতে মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গেলে হত্যার বিষয়টি প্রকাশ করে দেয় নিহতের সাত বছরের মেয়ে লিমা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত ইকবাল হোসেন (৩৫) পেশায় পোশাক শ্রমিক ছিলেন। দীর্ঘ ১৫ বছর আগে তিনি তার স্ত্রী হ্যাপি আক্তারের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। পরিবারটি দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কাঁচপুর এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করছিল।
স্থানীয়রা জানান, হ্যাপি আক্তার কাঁচপুর এলাকার এক টেইলার্স কর্মী রুবেল মিয়ার সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। বিষয়টি জানতে পেরে ইকবাল স্ত্রীকে সাবধান করেন। কিন্তু ২০ অক্টোবর রাতে বাসায় এসে হ্যাপিকে প্রেমিক রুবেলের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলেন।
এসময় বাগবিতণ্ডা শুরু হলে রাগের মাথায় হ্যাপি ও রুবেল মিলে ইকবালকে শ্বাসরোধ ও মারধর করে হত্যা করেন বলে অভিযোগ পরিবারের। ঘটনার পর রাতে তারা মরদেহ লুকিয়ে রাখে এবং পরদিন সকালে গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার উদ্দেশে রওনা দেয়। গভীর রাতে মরদেহ গাইবান্ধার কুপতলা ইউনিয়নের বাড়িতে পৌঁছানোর পর নিহতের মেয়ে লিমা পরিবারের সদস্যদের কাছে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেয়। সে জানায়, “মা আর রুবেল চাচা মিলে বাবাকে মেরেছে।”
এই কথা শুনে নিহতের স্বজনরা মরদেহ পরীক্ষা করে দেখতে পান শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন। সঙ্গে সঙ্গে তারা স্থানীয়দের বিষয়টি জানান এবং পরে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়ে বুধবার (২২ অক্টোবর) বিকেলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হ্যাপি আক্তারকে আটক করা হয়।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহীনুল ইসলাম তালুকদার বলেন, “ঘটনাটি মূলত নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকায় ঘটেছে। আমরা ভুক্তভোগী পরিবারকে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি। এদিকে হ্যাপিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তার বক্তব্য রেকর্ড করা হচ্ছে এবং তাকে রূপগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।”
তিনি আরও বলেন, “মরদেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে হত্যার প্রকৃত কারণ স্পষ্ট হবে। প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।” ঘটনাটি প্রকাশের পর কুপতলা ইউনিয়নসহ আশপাশের এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, শিশুর নির্ভীক বক্তব্য না থাকলে হয়তো এই হত্যার ঘটনা চিরতরে চাপা পড়ে যেত। তারা প্রশাসনের প্রতি দ্রুত বিচার সম্পন্ন করার আহ্বান জানিয়েছেন।
Leave a comment