বাংলা চলচ্চিত্রের অমর নায়ক সালমান শাহর মৃত্যু নিয়ে চলমান দীর্ঘ বিতর্ক নতুন মোড় নিয়েছে। মৃত্যুর প্রায় তিন দশক পর অবশেষে দায়ের হলো হত্যা মামলা। সোমবার (২১ অক্টোবর) দিবাগত রাতে রাজধানীর রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করেন সালমান শাহর মামা আলমগীর কুমকুম।
মামলার এজাহারে প্রথম আসামি হিসেবে নাম রয়েছে সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক। এছাড়া অভিযুক্ত হয়েছেন ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই, লতিফা হক লুসি, চলচ্চিত্রের খলনায়ক ডন, এবং আরও কয়েকজন। মোট ১১ জনকে সরাসরি অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং অজ্ঞাতনামা কয়েকজনের নামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
সোমবার সকালে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত সালমান শাহর মৃত্যুর তদন্তে ‘গুরুতর ত্রুটি ও অবহেলার’ অভিযোগ তুলে পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেন। আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, “সালমান শাহর মৃত্যুর তদন্তে পদে পদে অন্যায় ও অবহেলা হয়েছে, কেউই দায়িত্বশীল আচরণ করেনি।” এর মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মামা আলমগীর কুমকুম আনুষ্ঠানিকভাবে হত্যা মামলা দায়ের করেন, যা এ মামলার নতুন অধ্যায় সূচনা করে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার ইস্কাটনের বাসা থেকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় সালমান শাহর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে এটি ‘আত্মহত্যা’ হিসেবে উল্লেখ করে মামলা রুজু করা হয়েছিল। এরপর একাধিক তদন্ত সংস্থা ঘটনাটি তদন্ত করলেও কেউ হত্যার প্রমাণ পায়নি।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ২০২০ সালে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়, যেখানে বলা হয় — সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন। তবে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী শুরু থেকেই এ প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন এবং দৃঢ়ভাবে দাবি করেন, “আমার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।”
নীলা চৌধুরীর এই দাবির ধারাবাহিকতায় মামা আলমগীর কুমকুম এবার আনুষ্ঠানিকভাবে হত্যার অভিযোগ আনেন। মামলার বাদী আলমগীর কুমকুম বলেন, “আমরা ২৯ বছর ধরে ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় আছি। সালমান শাহর মৃত্যু আত্মহত্যা নয়, এটা পরিকল্পিত হত্যা। এখন সময় এসেছে সত্য প্রকাশের।”
মামলার পর রমনা থানার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী মামলাটি পুনঃতদন্ত করা হবে এবং প্রয়োজনে পিবিআই ও সিআইডি যৌথভাবে তদন্তে যুক্ত হতে পারে।
Leave a comment