উত্তর আফ্রিকার লিবিয়ার উপকূলে মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) একটি নৌকায় অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৫০ জন শরণার্থী নিহত হয়েছেন। নৌকাটিতে মোট ৭৫ জন আরোহী ছিলেন; তাদের মধ্যে ২৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের অধিকাংশ সুদানি নাগরিক।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, উদ্ধারকৃতদের দ্রুত চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। সংস্থাটি সতর্ক করে জানিয়েছে, “সমুদ্রপথে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঠেকাতে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।”
২০১১ সালে লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশটি ইউরোপগামী অভিবাসীদের ট্রানজিট রুটে পরিণত হয়। বর্তমানে প্রায় ৮ লাখ ৬৭ হাজার অভিবাসী লিবিয়ায় অবস্থান করছে। গাদ্দাফির শাসনামলে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের অভিবাসীরা তেলসমৃদ্ধ লিবিয়ায় কাজ পেত, কিন্তু তার পতনের পর থেকে দেশটি প্রতিদ্বন্দ্বী মিলিশিয়াদের সংঘাতে জর্জরিত।
গত মাসেও ইয়েমেন উপকূলে নৌকা ডুবে অন্তত ৬৮ জন অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে। শুধু গত বছর ভূমধ্যসাগরে অন্তত ২,৪৫২ জন মারা গেছে বা নিখোঁজ হয়েছে। এ অঞ্চলের জলপথকে বিশ্বের অন্যতম প্রাণঘাতী অভিবাসন রুট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, লিবিয়ায় শরণার্থী ও অভিবাসীরা নিয়মিতভাবে নির্যাতন, ধর্ষণ ও চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভূমধ্যসাগরে অভিবাসন ঠেকাতে লিবিয়ার কোস্টগার্ডকে অর্থ ও সরঞ্জাম দিয়েছে, কিন্তু সেই কোস্টগার্ডের সঙ্গে মিলিশিয়াদের সম্পর্কের অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া ইউরোপীয় দেশগুলো রাষ্ট্রীয় উদ্ধার অভিযান ধাপে ধাপে বন্ধ করার কারণে সমুদ্রপথ আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন দাতব্য সংস্থাও রাষ্ট্রীয় নীতি ও সীমাবদ্ধতার কারণে উদ্ধার কার্যক্রমে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে।
লিবিয়ার এই দুর্ঘটনা আবারও তুলে ধরেছে—যতই সীমান্ত নিরাপত্তা বাড়ানো হোক, শরণার্থী ও অভিবাসীদের জন্য মানবিক সহায়তা ও নিরাপদ যাত্রার বিকল্প ব্যাবস্থা না থাকলে, বিপজ্জনক সমুদ্রপথে প্রাণহানির ঘটনা থামানো কঠিন।
Leave a comment