বাংলা লালনসংগীতের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী ফরিদা পারভীন আর নেই। শনিবার রাত ১০টা ১৫ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর।
ফরিদা পারভীনের প্রয়াণে দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সংগীত জগতের অমূল্য সম্পদ হারানোর এই মুহূর্তে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকেও শোক প্রকাশ করা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক যৌথ শোকবার্তা দিয়েছেন।
বিএনপির শোকবার্তা-
শনিবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তারা বলেন, “ফরিদা পারভীন ছিলেন লালন সংগীতের জীবন্ত কণ্ঠ। তার অসাধারণ কণ্ঠে পরিবেশিত লালনগীতি শুধু সংগীতের সৌন্দর্য নয়, মানবতা, সাম্য, ভালোবাসা ও সত্যের বাণী হয়ে মানুষের অন্তরে অনুরণিত হয়েছে।”
তারা আরও উল্লেখ করেন, “তার মৃত্যুতে জাতি এক মহান গুণী শিল্পীকে হারাল। বাংলা সংগীতে এই শূন্যতা কখনও পূরণ হওয়ার নয়।”
শোকবার্তায় বিএনপি নেতারা প্রয়াত শিল্পীর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অঙ্গন ও অসংখ্য ভক্ত-শ্রোতার প্রতিও সমবেদনা প্রকাশ করেন।
লালনসংগীতের জীবন্ত প্রতীক-
ফরিদা পারভীনকে বাংলা লালনসংগীতের অন্যতম শক্তিশালী ও জীবন্ত প্রতীক হিসেবে মনে করা হয়। তার কণ্ঠে লালনের গান বাঙালি সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছিল। ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’, ‘আমার গুরুর চরণধূলা’, ‘এ মন হারাবে কোথায়’সহ অসংখ্য গানে তিনি শ্রোতাদের হৃদয়ে স্থায়ী আসন গড়ে নেন।
সত্তরের দশক থেকে শুরু করে আজীবন লালনসংগীতের প্রচার ও প্রসারে নিবেদিত ছিলেন তিনি। দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চেও তিনি বাংলাদেশের সংগীতকে পরিচিত করিয়েছেন। তার অসাধারণ কণ্ঠ ও আত্মমগ্ন গায়কী বাউল ও লালনধারার চর্চাকে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দিয়েছে।
সম্মাননা ও অবদান-
তার অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মাননায় ভূষিত হন। বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদক ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ বিভিন্ন মর্যাদাপূর্ণ সম্মাননায় ভূষিত করে। তার শিল্পকর্ম শুধু সংগীতেই সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং এটি ছিল মানবতার বাণী ছড়িয়ে দেওয়ার এক অনন্য মাধ্যম।
জাতির অপূরণীয় ক্ষতি-
ফরিদা পারভীনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভক্ত, শ্রোতা এবং সংগীতপ্রেমীরা তাকে স্মরণ করছেন আবেগঘন বার্তায়। সংগীত অঙ্গনের গুণীজনরা বলছেন, তার প্রয়াণে বাংলা সংগীতে এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো।
বিএনপির নেতারা শোকবার্তায় উল্লেখ করেছেন যে, সেটি কেবল রাজনৈতিক শোক নয়; বরং জাতির এক অমূল্য সাংস্কৃতিক সম্পদ হারানোর দুঃখকেও প্রতিফলিত করে লালনসংগীতের সাধনা ও প্রচারে সারাজীবন নিবেদিতপ্রাণ এই শিল্পী আজ নেই, কিন্তু তার কণ্ঠে অমর হয়ে থাকবে মানবতা, ভালোবাসা ও সাম্যের বাণী। ফরিদা পারভীন শুধু একজন গায়িকা ছিলেন না, তিনি ছিলেন বাংলা সংস্কৃতির এক জীবন্ত ইতিহাস।
Leave a comment