ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব ও ভোটার তালিকায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে আয়োজিত বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার সময় আটক হন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রসহ বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের শীর্ষ নেতারা। সোমবার (১১ আগস্ট) সকালে মিছিল নিয়ে নির্বাচন কমিশনের দপ্তরের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় দিল্লি পুলিশ তাদের আটক করে। পরে কয়েক ঘণ্টা পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
বিরোধী জোটের এই বিক্ষোভের মূল উদ্দেশ্য ছিল- বিহারের সাম্প্রতিক ভোটার তালিকা জালিয়াতির অভিযোগ ও ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সম্ভাব্য অনিয়মের প্রতিবাদ করা। সকালে পার্লামেন্ট ভবনের সামনে থেকে মিছিল শুরু হয়, যা নির্বাচন কমিশন ভবন পর্যন্ত যাওয়ার কথা ছিল। বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ—নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা থেকে বহু নাগরিকের নাম ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দিচ্ছে, যা ভোটাধিকার হরণের সমান।
তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য সুস্মিতা দেব বলেন, “আজ বিরোধী জোটের প্রত্যেক সাংসদ নির্বাচন কমিশনের সামনে প্রতিবাদ করতে নেমেছেন। কারণ, যারা দেশের নাগরিক, তাদের ভোটাধিকার কেড়ে নিচ্ছে কমিশন।”
দিল্লি পুলিশের ডিসিপি দেবেশ কুমার জানান, নির্বাচন কমিশন প্রায় ৩০ জন সাংসদকে বৈঠকের অনুমতি দিয়েছিল। তবে মিছিলে অংশ নেওয়া সাংসদের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় আইনশৃঙ্খলার স্বার্থে এবং যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ তাদের আটক করে। তিনি বলেন, “আমরা কেবলমাত্র আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পদক্ষেপ নিয়েছি।”
পুলিশের ভাষ্য, আটক করার পরও পরিস্থিতি শান্ত ছিল এবং পরে সকলকেই মুক্তি দেওয়া হয়।আটক হওয়ার পর রাহুল গান্ধী সাংবাদিকদের বলেন, “এই লড়াই রাজনৈতিক নয়, এটা সংবিধান বাঁচানোর লড়াই। এখানে কারো কথা বলার অধিকার নেই। কথা বললেই আটক করা হচ্ছে। আমরা স্বচ্ছ ভোটার তালিকার জন্য লড়াই চালিয়ে যাব।”
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রও একই সুরে বলেন, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ গণতন্ত্রের অন্যতম অধিকার, অথচ সরকার বিরোধী কণ্ঠ রোধ করতে প্রশাসনকে ব্যবহার করছে। ইন্ডিয়া জোটের নেতারা অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় সরকার নির্বাচন কমিশনের উপর প্রভাব বিস্তার করছে এবং বিরোধীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমন করছে। তাদের মতে, এ ধরনের পদক্ষেপ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য হুমকি এবং জনগণের আস্থা নষ্ট করে।
কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, “আমরা চাই নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করুক। কিন্তু বর্তমানে তা সরকারের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।”
ভারতের রাজনীতিতে বিক্ষোভ ও গণআন্দোলন নতুন নয়। তবে সংসদ সদস্যদের শান্তিপূর্ণ মিছিল থেকে আটক করার ঘটনা রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধীদের একজোট হয়ে ভোটার তালিকার অনিয়ম ও নির্বাচনী স্বচ্ছতা নিয়ে সরব হওয়া কেন্দ্রীয় সরকারের জন্য চাপের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
Leave a comment