প্রায় ২৩ বছর আগের এক নৃশংস ঘটনা আজ বিচারে পরিণত হলো। রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে ২০০২ সালে যৌতুক না দেওয়ার অভিযোগে স্ত্রী ডালিয়া বেগমকে পুড়িয়ে হত্যার অপরাধে তাঁর স্বামী মো. টিটুকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪-এর বিচারক মুন্সি মো. মশিয়ার রহমান রোববার এ রায় ঘোষণা করেন। অন্য চার আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটে ২০০২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর। নিজের বাড়িতে মো. টিটু কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন ডালিয়ার শরীরে। দগ্ধ অবস্থায় ছয় দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ঢাকার একটি হাসপাতালে ডালিয়া মারা যান। মৃত্যুর আগে তিনি জবানবন্দি দিয়ে বলেন যে, তাঁর স্বামী যৌতুকের জন্য তাকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে।
মামলার নথি অনুযায়ী, টিটু ও ডালিয়ার বিয়ে হয় প্রায় ২৮ বছর আগে মুন্সিগঞ্জে। বিয়ের পর থেকেই টিটু ডালিয়াকে যৌতুক হিসেবে ৫০ হাজার টাকা দাবি করতেন। যৌতুক দিতে না পারায় তিনি নিয়মিত ডালিয়াকে শারীরিক নির্যাতন করতেন। পরিস্থিতি এতটাই কঠিন হয়ে দাঁড়ায় যে, ডালিয়ার বাবা রওশন আলী শেষ পর্যন্ত কামরাঙ্গীরচর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
পুলিশ দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০০৩ সালের ৬ জানুয়ারি টিটুসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দায়ের করে। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন টিটুর মা আমেনা বেগম এবং বাকিরা টিটুর আত্মীয়। আজকের রায়ে আমেনা বেগম, শাহ আলম, যেবনী ও মোস্তফাকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত টিটুকে দ্রুতই কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনা যৌতুক প্রতিরোধ ও নারীর নিরাপত্তার জন্য আইন ও বিচার ব্যবস্থার গুরুত্ব আবারও সামনে এনেছে। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও ন্যায়বিচার কার্যকর হওয়ায় ক্ষতিপূরণ স্বরূপ এক ধরনের প্রশান্তি পাওয়া গেল বলে মনে করছেন সামাজিক কর্মীরা। তবে তারা বলছেন, সমাজের অনেক ক্ষেত্রেই যৌতুকের মতো অপপ্রথা এখনও বিদ্যমান, যা বন্ধ করতে আরও কঠোর আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা প্রয়োজন।
মোটামুটি এই রায় একদিকে যেমন নারী নির্যাতন প্রতিরোধে আইন প্রয়োগে সাহস যোগাবে, অন্যদিকে এটি একটি সতর্কবার্তা স্বরূপ কাজ করবে যাঁরা নারীদের ওপর নির্যাতন চালান। তবে বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা ও অনেক সময় বিলম্ব হওয়া নিয়ে কিছু বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।
মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে সামাজিক মাধ্যমে নানা ধরনের নির্যাতন বা অত্যাচারের ঘটনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় আধুনিক যুগে আইনের যথাযথ প্রয়োগের গুরুত্ব আরও বেড়েছে।
Leave a comment