বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ কেবল একটি পরিবারের নন, তিনি সমগ্র রাষ্ট্রের সম্পদ। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তাঁর অসামান্য নেতৃত্ব ও দূরদর্শিতায়ই নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত ও সংগঠিত হয়েছিল। শনিবার তাঁর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত এক নাগরিক স্মরণসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বক্তারা তাজউদ্দীনের আদর্শকে সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধ ও সাম্প্রতিক জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনায় বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার জন্য দেশপ্রেমের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
সেন্টার ফর তাজউদ্দীন আহমদ রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকটিভিজম (সিতারা) আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে তাজউদ্দীন আহমদের পুত্র তানজিম আহমদ সোহেল তাজ বলেন, বঙ্গবন্ধুর গ্রেপ্তারের পর সৃষ্ট নেতৃত্বের বিশাল শূন্যতা পূরণ করেছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। তিনি বলেন, ‘তাজউদ্দীন আহমদ শুধু আমাদের পিতা নন, তিনি এ রাষ্ট্রের সম্পদ। আজ আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাইয়ের চেতনায় এক হয়ে ন্যায়বিচার ও সাম্যের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।’ অনুষ্ঠানে ভারতীয় দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি ভি কে গোকুল বলেন, তাজউদ্দীন আহমদ শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিতই করেননি, স্বাধীন বাংলাদেশে একজন সংবেদনশীল মানুষ ও স্বনির্ভর গ্রামীণ অর্থনীতির স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
বেলা সাড়ে তিনটায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। এরপর সম্প্রতি উত্তরায় যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে মাইলস্টোন স্কুলের নিহত শিক্ষার্থীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে তাজউদ্দীন আহমদের জীবন ও কর্মের ওপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন এবং দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। ড. কামাল হোসেন ‘তাজউদ্দীন আহমদ: শতবর্ষে সংশপ্তক’ এবং লেখক মঈদুল হাসান ‘মুক্তির কণ্ঠস্বর তাজউদ্দীন আহমদ’ বই দুটির মোড়ক উন্মোচন করেন।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে বীর মুক্তিযোদ্ধা, জুলাইযোদ্ধা, লেখক ও শিক্ষাবিদসহ ছয়টি বিভাগে ১০০টি সম্মাননা প্রদান করা হয়। তাজউদ্দীন আহমদের জ্যেষ্ঠ কন্যা শারমিন আহমদ বলেন, ‘আমরা সম্মাননা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো দল বা মতকে প্রাধান্য দিইনি, আমাদের মূল লক্ষ্য দেশপ্রেমের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়া।’ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে শিক্ষাবিদ আবুল কাসেম ফজলুল হক, মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেন এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফৌজিয়া মোসলেমসহ দেশের বিশিষ্ট নাগরিকেরা উপস্থিত ছিলেন।
Leave a comment