জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রা ঘিরে গত বুধবারের সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনায় চার দিন পর গোপালগঞ্জ সদর থানায় চারটি পৃথক হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রতিটি মামলাতেই আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের প্রায় দেড় হাজার করে মোট প্রায় ৬ হাজার অজ্ঞাতপরিচয় নেতাকর্মী ও ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান রোববার এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। পুলিশ বাদী হয়ে মামলাগুলো দায়ের করে। সহিংসতায় মোট পাঁচজনের মৃত্যু হলেও প্রথম চারজনের মৃত্যুর ঘটনায় এই মামলাগুলো করা হলো। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া আরেকজনের ঘটনাতেও হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার এনসিপির নেতাকর্মীরা সমাবেশ শেষে গাড়িবহর নিয়ে মাদারীপুরের দিকে যাওয়ার পথে শহরের এসকে সালেহিয়া মাদ্রাসার কাছে হামলার শিকার হন। কিশোর রমজান কাজী (১৭) নিহতের ঘটনায় সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আইয়ুব হোসেন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। এজাহারে বলা হয়, ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ দুষ্কৃতকারীরা দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে গাড়িবহরে হামলা চালায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাধা দিলে তারা গুলি চালায়, এতে রমজান কাজী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
একই ধরনের বর্ণনায় অন্য তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। কলেজ মসজিদের সামনে দীপ্ত সাহা (২৭) নিহতের ঘটনায় এসআই শামীম হোসেন, লঞ্চঘাট এলাকায় সোহেল রানা মোল্লা (৩০) নিহতের ঘটনায় এসআই আবুল কালাম আজাদ এবং একই এলাকায় ইমন তালুকদার (১৭) নিহতের ঘটনায় এসআই শেখ মিজানুর রহমান বাদী হয়ে মামলা করেছেন। প্রতিটি মামলাতেই ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে, যাদের আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ ‘দুষ্কৃতকারী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে, ওই ঘটনায় আহত রিকশাচালক রমজান মুন্সী (৩২) বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। তার মৃত্যুর ঘটনাতেও পৃথক একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হবে বলে জানা গেছে।
সহিংসতায় নিহত রমজান মুন্সী ছাড়া অন্য চারজনের মরদেহের ময়নাতদন্ত বা সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়নি। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, বিলম্বে হলেও ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হবে। তবে এর মধ্যে দীপ্ত সাহার মরদেহ দাহ করে ফেলায় তার ক্ষেত্রে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।
Leave a comment