স্বৈরাচারী সরকারের পতনের এক বছর পূর্তিতে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সংস্কার বিতর্ক, বিএনপির ভূমিকা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বিশদভাবে কথা বলেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে দক্ষিণপন্থীদের উত্থান লক্ষণীয়, যা তাকে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করছে।
সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, শারীরিকভাবে ভালো না থাকলেও রাজনৈতিক বাস্তবতা তাকে আরও বেশি ব্যথিত করছে। স্বীকার করেছেন, চিকিৎসা ও পারিবারিক কারণে কিছুটা সময় রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও দলের সিদ্ধান্ত ও কর্মপন্থা থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন না।
পূর্ববর্তী আন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তরুণদের অগ্রণী ভূমিকা ও ছাত্রদের অংশগ্রহণ এই আন্দোলনের ভিত্তি। তবে বিএনপির অবস্থান ছিল সচেতনভাবে সহায়ক। তিনি জানান, ছাত্রদের কোটা আন্দোলনে দল সরাসরি না গেলেও সমর্থন দিয়েছে এবং পরবর্তীতে সক্রিয় যোগাযোগ রেখেছে।
গণ-অভ্যুত্থানের শরিক দলগুলোর বিভক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজনীতিতে এ রকম মতপার্থক্য অস্বাভাবিক নয়। এটি সময়ের সঙ্গে নিরসন হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তবে কিছু দল বিএনপিকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে চায়—এটিকে তিনি রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেই দেখেন।
সংস্কার ইস্যুতে মতবিরোধের ব্যাখ্যায় ফখরুল বলেন, বেশিরভাগ বিষয়ে ঐকমত্য থাকলেও কিছু বিষয় যেমন সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচন বা উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি নিয়ে বাস্তবতা বিবেচনায় মতানৈক্য আছে, যেটি আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসাযোগ্য।
তিনি স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেন যে, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে প্রস্তাবিত জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব ছাত্রদের পক্ষ থেকে এসেছে। এটি কোনো তৃতীয় পক্ষের চিন্তা হতে পারে, তবে দল হিসেবে বিএনপি মনে করে, সংকটকালে তা টিকত না।
সম্প্রতি সোহাগ হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং বিএনপি-তারেক রহমানকে উদ্দেশ করে অশালীন স্লোগান বিষয়ে ফখরুল বলেন, এটি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচার। তারেক রহমানকে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব হিসেবে জনগণ দেখতে শুরু করেছে বলেই এমন আক্রমণ হচ্ছে।
আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি জানান, প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে প্রার্থী বাছাই হচ্ছে এবং যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের আসন ছাড়ার ব্যাপারেও আলোচনা হবে। যদিও শরিক দলগুলোর মধ্যে কিছু মতানৈক্য আছে, তবে সেটি গণতান্ত্রিক বাস্তবতা।
আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির একক প্রাধান্য প্রশ্নে তিনি বলেন, বিরোধী শক্তি হিসেবে জামায়াত, এনসিপি, চরমোনাই পীর প্রমুখ আছেন। নতুন অ্যালায়েন্স গঠনের মাধ্যমে বিরোধিতা আসবে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, বর্তমান অস্থিরতা, সহিংসতা ও বৈদেশিক সংকট পরিকল্পিতভাবে সৃষ্টি হচ্ছে—একটি ফ্যাসিস্ট শক্তির দ্বারা। এতে সরকারের দুর্বলতা ও গোয়েন্দা সংস্থার ব্যর্থতা আরও স্পষ্ট।
তারেক রহমানের অনুপস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, লন্ডন থেকেই নেতৃত্ব দিয়ে তিনি দলের অভ্যন্তরীণ ও কৌশলগত দিক পরিচালনা করছেন এবং প্রয়োজনে তিনি আসবেন।
অর্থনীতির অবস্থা সম্পর্কে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, পূর্ববর্তী সরকারের সময়ে যারা ব্যাংক লুট করেছে, দেশের অর্থ পাচার করেছে, ক্ষমতায় গেলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিএনপির মূল লক্ষ্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা।
সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনের মাধ্যমেই দেশের রাজনৈতিক সংকটের মীমাংসা হতে পারে। জনগণের ম্যান্ডেটেই স্থিতিশীল, গণতান্ত্রিক ও আধুনিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব বলে বিএনপি বিশ্বাস করে।
Leave a comment