গাজা উপত্যকায় খাদ্য সংকট ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানায়, বর্তমানে গাজার প্রতি তিনজন বাসিন্দার একজন না খেয়ে দিন পার করছেন। শিশু ও নারীদের মধ্যে পুষ্টিহীনতা দ্রুত বাড়ছে এবং প্রায় ৯০ হাজার নারী ও শিশুকে জরুরি চিকিৎসা সহায়তা প্রয়োজন বলে সংস্থাটি জানিয়েছে।
শুক্রবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, অপুষ্টিজনিত কারণে একদিনেই আরও নয়জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর ফলে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২২ জনে।
গাজায় খাদ্য ও প্রয়োজনীয় পণ্য প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করেছে ইসরায়েল। যদিও তারা দাবি করেছে, ত্রাণ প্রবেশে এখন কোনো বাধা নেই এবং এ বিষয়ে হামাসকে দায়ী করছে। ইসরায়েলের একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে গাজায় উড়োজাহাজ থেকে ত্রাণ ফেলার অনুমোদন দেওয়া হতে পারে। তবে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো এই পদ্ধতির কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত ও জর্ডান ইতিমধ্যে ত্রাণ ফেলার উদ্যোগ নিলেও ইসরায়েলি অনুমতির অভাবে তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। একই সঙ্গে জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য এক যৌথ বিবৃতিতে গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয়ের অবসান এবং অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। দেশগুলো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রতি ইসরায়েলের প্রতিশ্রুতি পালনের গুরুত্বও তুলে ধরেছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, “গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের পেছনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নির্লিপ্ততা কাজ করছে। এই নিষ্ক্রিয়তা ব্যাখ্যাতীত। এখানে করুণা নেই, মানবতা নেই।”
গুতেরেস জানান, ২৭ মে থেকে এ পর্যন্ত গাজার ভেতরে খাদ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। একই সময় থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন জাতিসংঘের বিকল্প হিসেবে সেখানে ত্রাণ বিতরণ শুরু করে।
এদিকে, যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিমুক্তির আলোচনায় অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল কাতারে মধ্যস্থতার জন্য পাঠানো দল প্রত্যাহার করে নিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মন্তব্য করেছেন, “হামাস কোনো চুক্তি চায় না, তারা মরতে চায়।” তবে হামাস এই বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছে এবং জানিয়েছে, আলোচনা এখনও পুরোপুরি ভেস্তে যায়নি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১,২০০ মানুষ নিহত ও ২৫১ জন জিম্মি হওয়ার পর ইসরায়েল গাজায় হামলা শুরু করে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৫৯ হাজার ছাড়িয়েছে।
বিশ্বের দুর্ভিক্ষ–বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই অনাহার গাজায় গণহত্যার নতুন রূপ হতে পারে। বিশেষ করে শিশুরা দ্রুত মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই সংকট নিরসনে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
Leave a comment