রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৫ জনে দাঁড়িয়েছে। আজ শনিবার সকালে দুই ঘণ্টার ব্যবধানে মারা গেছে আরও দুইজন—একজন স্কুলশিক্ষার্থী, অন্যজন স্কুলের এক কর্মচারী। তারা দুজনই ঢাকার জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
নিহত শিক্ষার্থীর নাম জারিফ ফারহান (১৩)। সে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল। রাজধানীর উত্তরা এলাকায় বাবা হাবিবুর রহমান ও মা নুসরাত আক্তারের সঙ্গে বসবাস করত। তাদের গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ী জেলায়। জারিফ সকাল ৯টার দিকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) মৃত্যুবরণ করে। চিকিৎসকরা জানান, তার শরীরের ৪০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল।
অপর মৃত ব্যক্তি মাসুমা বেগম (৩৮) মাইলস্টোন স্কুলের একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ছিলেন। ভোলা জেলার বাসিন্দা মাসুমা উত্তরায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। সকাল ১১টার কিছু আগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তাঁর শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল বলে জানান বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক শাওন বিন রহমান।
এ নিয়ে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে এ ঘটনায় মোট ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে, শুক্রবার রাত পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ছিল ৩৩। শনিবার সকালে আরও দুজনের মৃত্যুতে এখন সেই সংখ্যা ৩৫-এ দাঁড়িয়েছে।
গত সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হয়। এতে ভবনে আগুন ধরে যায় এবং ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই স্কুলশিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারী।
দুর্ঘটনার পরপরই উদ্ধারকাজে অংশ নেয় ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আহতদের মধ্যে কয়েকজন এখনো জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে চিকিৎসাধীন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পাঁচজনের অবস্থা এখনও সংকটাপন্ন।
এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত স্কুল প্রাঙ্গণ ও আশপাশের ভবনগুলোতে সাধারণ মানুষের ভিড় বাড়ছে। দুর্ঘটনার কারণ তদন্তে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ বিমান কিভাবে একটি জনবহুল এলাকায় বিধ্বস্ত হলো তা নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন।
নিহতদের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শিশু জারিফের মা বারবার অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন। তিনি বলেন, “আমার ছেলেটা স্কুলে গিয়েছিল পড়াশোনা করতে, ফিরে এলো লাশ হয়ে।”
সারাদেশে এ দুর্ঘটনার প্রভাব পড়েছে। সামাজিক মাধ্যমে চলছে নিন্দার ঝড়, নিরাপত্তাব্যবস্থা ও প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নাগরিকরা। সরকারের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও আহতদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
তবে উত্তরার আকাশে আবারও যেন এমন ধ্বংসের ছায়া না নামে—এই আশঙ্কাই এখন শহরের প্রতিটি পরিবারের মধ্যে।
Leave a comment