লন্ডনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ওলউইচে চলন্ত বাসে ১৪ বছর বয়সী কেলিয়ান বোকাশাকে পরিকল্পিতভাবে কুপিয়ে হত্যার দায়ে দুই কিশোরকে কমপক্ষে ১৫ বছর ১১০ দিনের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছে আদালত। ৭ জানুয়ারি ঘটে যাওয়া এই নির্মম হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তদের বয়স বর্তমানে ১৬ হলেও আইনি কারণে তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। তারা দুজনই মাচেটি দিয়ে কেলিয়ানকে ২৭ বার আঘাত করেছিল।
লন্ডনের ওল্ড বেইলি আদালতে বিচারপতি মার্ক লুক্রাফ্ট কেসি রায়ে বলেন, এই হত্যাকাণ্ড “নির্বিচার ও বীভৎস”, এবং এটি যুক্তরাজ্যে বেড়ে চলা ছুরি সহিংসতার ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে। তিনি বলেন, “সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, হামলার সময় তোমরা হাসছিলে। এই হাসি কেলিয়ানের পরিবারের জন্য মৃত্যুর চেয়ে ভয়ানক।”
হত্যার পরপরই ধৃত দুই আসামি অস্ত্র রাখার দায় স্বীকার করে এবং মে মাসে তারা হত্যার দায়ও স্বীকার করে নেয়। এদের মধ্যে একজন প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে আদালতে নিজের অবস্থান পাল্টায়।
কেলিয়ানের মা মারি বোকাশা আদালতের বাইরে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, “ওরা কেবল আমার সন্তানকে হত্যা করেনি, ওরা একটি গোটা জগতকেই গুঁড়িয়ে দিয়েছে। আমি এখন একজন ভাঙা আত্মা।” তিনি জানান, নিজের সন্তানের ১৫তম জন্মদিনে তাকে সমাধিস্থলে গিয়ে পালন করতে হয়েছে এবং এখন তিনি বাসে উঠতে ভয় পান, বিশেষ করে সেই ৪৭২ নম্বর বাসে, যেখানে তার সন্তান নিহত হয়।
তিনি বলেন, “এই দুই ছেলে আমার ছেলের জীবন নিঃসঙ্কোচে কেড়ে নিয়েছে, এখন তাদের সেই কাজের ফল ভোগ করতে হবে। আমার একমাত্র আশা, তারা যেন সমাজে ফেরার আগে প্রয়োজনীয় সহায়তা পায়।”
মামলার প্রসিকিউটর টম লিটল কেসি আদালতকে জানান, বাসের উপরের তলায় ওঠামাত্রই কেলিয়ানের ওপর হামলা চালানো হয়। হামলায় তার প্রধান রক্তনালিতে গভীর ক্ষত হয় এবং ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়। এক অভিযুক্ত হামলার সময় হাসছিল, যা কিশোর অপরাধের অমানবিক দিকটি তুলে ধরে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিটেকটিভ চিফ ইনস্পেক্টর সারা লি বলেন, “এই সহিংসতা লন্ডনের কৃষ্ণাঙ্গ তরুণদের প্রভাবিত করছে। যতক্ষণ না রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, নীতিনির্ধারক ও সমাজের সকলে একযোগে এর বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, ততদিন এই ছুরিকাঘাত থামবে না।”
হত্যাকাণ্ডের সময় ব্যবহৃত একটি মাচেটি পরে টেমস নদীতে ফেলে দেওয়া হয়, যেটি উদ্ধার করা হয়। নিহত কিশোরের মা জানান, তার সন্তান কেলিয়ান ৬ বছর বয়স থেকেই গ্যাং চক্র দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছিল, এবং তিনি বহুবার চেষ্টা করেও সমাজসেবা বিভাগ থেকে যথাযথ সহায়তা পাননি।
মারির আবেগভরা আহ্বান ছিল: “একটি ছুরি তোলার আগে নিজ মায়ের কথা ভাবো। এক মুহূর্তের রাগে নিজের ভবিষ্যৎ নষ্ট করো না। রাস্তায় বড় হওয়ার চেয়ে, মায়ের ভালোবাসায় বড় হও।”
কেলিয়ানের বন্ধু ও পরিচিতরা তাকে “জ্ঞানী এবং সংবেদনশীল ছেলে” হিসেবে স্মরণ করেছেন। কিন্তু একটি ছুরি তার সব সম্ভাবনা থামিয়ে দিয়েছে – যা লন্ডনের তরুণ সমাজের জন্য এক বড় সতর্কবার্তা।
Leave a comment