পেটব্যথা একটি সাধারণ উপসর্গ হলেও এটি অনেক সময় ভয়ানক অসুস্থতার পূর্বাভাস হতে পারে। এমনই একটি রোগ হলো প্যানক্রিয়াটাইটিস, যেটি অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ। বাংলাদেশে বেশির ভাগ মানুষ এই রোগ সম্পর্কে খুব কমই জানেন। ফলে অনেক সময় এটি গ্যাস্ট্রিক সমস্যা হিসেবে ভুল تشخيص হয়, যার কারণে চিকিৎসা পেছায় এবং মারাত্মক জটিলতা দেখা দেয়।
প্যানক্রিয়াটাইটিস বলতে বোঝায় প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয়ে প্রদাহ হওয়া। এটি শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা ইনসুলিন, পাচকরসসহ নানা হরমোন তৈরি করে। প্যানক্রিয়াটাইটিস দুই রকমের হতে পারে— আকস্মিক বা অ্যাকিউট, এবং দীর্ঘস্থায়ী বা ক্রনিক।
এই রোগের পেছনে অন্যতম কারণ হলো পিত্তথলিতে পাথর। মদ্যপানে অভ্যস্তদের মধ্যে এই রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে। রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেশি হলেও এটি হতে পারে। কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং ভাইরাস সংক্রমণ থেকেও এই রোগ হতে পারে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে অজানা কারণেও প্যানক্রিয়াটাইটিস দেখা দেয়।
প্যানক্রিয়াটাইটিসের প্রধান উপসর্গ হলো পেটের ওপরের দিকে তীব্র ব্যথা, যা পিঠ পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। শুয়ে থাকলে ব্যথা বেড়ে যায় এবং সামনের দিকে ঝুঁকে থাকলে কিছুটা উপশম হয়। সঙ্গে বমি বা বমি বমি ভাব দেখা দেয়। রোগী সাধারণত খুবই অসুস্থ বোধ করেন এবং তীব্র ব্যথার কারণে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজন হয়।
ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিসে ব্যথা কিছুটা মৃদু হয়, তবে তা বারবার হয় এবং তৈলাক্ত খাবার খেলে বাড়ে। পায়খানা ফ্যাকাসে ও তৈলাক্ত হতে পারে, হজমে সমস্যা হয়, ওজন কমে যায়। ইনসুলিন নিঃসরণ কমে গিয়ে ডায়াবেটিসও দেখা দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. সাইফ হোসেন খান জানান, সময়মতো চিকিৎসা না পেলে অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস জীবনঘাতী হয়ে উঠতে পারে। তাই যে কোনো ধরনের পেটব্যথাকে হালকাভাবে না নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
এই রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা খুবই জরুরি। তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলা, ধূমপান ও মদ্যপান বন্ধ করা, পিত্তথলির রোগের সঠিক চিকিৎসা এবং রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন।
সচেতন জীবনাচার ও সময়মতো চিকিৎসাই হতে পারে প্যানক্রিয়াটাইটিস থেকে রক্ষার প্রধান উপায়।
Leave a comment