Home আন্তর্জাতিক গাজায় প্রতিদিন হত্যা করা হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ ফিলিস্তিনি, মরদেহ খায় কুকুর
আন্তর্জাতিক

গাজায় প্রতিদিন হত্যা করা হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ ফিলিস্তিনি, মরদেহ খায় কুকুর

Share
Share


গাজা উপত্যকায় একের পর এক মরদেহ জমছে। রক্তাক্ত মানবদেহ এখন কুকুরের খাদ্য হয়ে উঠেছে। বিশ্ব মানবতা যেখানে নির্বাক, সেখানে পশু অধিকার নিয়ে সরব থাকার কথা যাঁদের, তাঁরাও নিস্তব্ধ। এ যেন নরকেরই প্রতিচ্ছবি। শুধু সংখ্যায় নয়, প্রতিটি মৃত্যু হয়ে উঠেছে মানব সভ্যতার বিবেকের প্রশ্ন।

গড় হিসেবে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ জন নিহত হচ্ছেন, ভালো দিনগুলোয় সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১০০ থেকে ১৫০ জনে। ১৮ মার্চ ২০২৫ থেকে শুরু করে ২২ জুলাই পর্যন্ত গাজায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৮ হাজার ২৬৮ জন, আহত হয়েছেন তার তিনগুণ মানুষ। চিকিৎসা, আশ্রয়, খাদ্য—সবই সংকটে।

ইসরায়েলি রাষ্ট্রের চোখে গাজার মানুষ আর মানুষ নেই। তাদের পরিণত করা হয়েছে ‘সন্ত্রাসী’, ‘জঙ্গি’ কিংবা ‘দুই পেয়ে জানোয়ারে’। ভাষা ও প্রচারণার মাধ্যমে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি থেকে সরিয়ে দেওয়ার এই উদ্যোগই বৈধতা দিচ্ছে এই গণহত্যাকে। কোনো শিশু, কোনো মা, কোনো বৃদ্ধ—কেউই রক্ষা পাচ্ছে না। মরদেহ পড়ে থাকে দিনের পর দিন, সেগুলোর গন্ধে ছুটে আসে কুকুর, শুরু হয় ভক্ষণ।

গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা, পরিচ্ছন্নতা, এমনকি দাফনব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। মহামারি বা মহাবিপর্যয়ের ঝুঁকি ভয়াবহভাবে বাড়ছে। যেখানে রাষ্ট্রহীন মানুষগুলো একটুকরো খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়ায়, সেখানে বোমার আঘাতে লাশ হয়ে পড়ে থাকে দীর্ঘ সময়। আর সেই লাশকে খুঁড়ে খায় রাস্তার কুকুর।

বিশ্বব্যাপী পশু অধিকার নিয়ে সরব অনেক সংস্থা, আন্দোলন আর কথিত সচেতন ব্যক্তিত্ব—এখানে তাঁদের কণ্ঠস্বর অনুপস্থিত। তাঁদের কাছে গাজার শিশুর মৃত্যু, ছিন্নভিন্ন শরীর, মানুষের মাংস খাওয়া কুকুর কোনো ইস্যু নয়? পশুদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার এই সংগঠনগুলো কি মরদেহ খাওয়ার দায় থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারে?

সাংবাদিকদের এই নরকে প্রবেশের অনুমতি নেই, তাই আমরা দেখতে পারছি না সেই রক্তাক্ত দৃশ্য: দেয়ালে ঝুলে থাকা একটি হাত, মুখবিহীন দেহ, ছিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, এবং প্রাণের শেষ আর্তনাদ। সাহিত্যে নোবেলজয়ী হোসে সারামাগো বলেছিলেন, “স্বর্গ ও নরক আবিষ্কার করতে চাইলে অবশ্যই মানবদেহকে জানতে হবে।” গাজা যেন হয়ে উঠেছে সেই পরিচয়হীন দেহের রাজ্য—যেখানে নরক বাস্তব, স্বর্গ কল্পনা।

এই মৃত্যু আর হাহাকার শুধু সংখ্যার খেলা নয়। প্রতিটি দেহ একেকটি জীবন, একেকটি গল্প। আজ সেই গল্পগুলো খুন হচ্ছে, মুছে যাচ্ছে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে—যেখানে মানুষ মরে, আর কুকুর খায়, আর আমরা সবাই চুপ।

 

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

অধিকৃত পশ্চিম তীর-জর্ডান উপত্যকা সংযুক্তিতে ইসরায়েলে প্রস্তাব পাস

ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটে অধিকৃত পশ্চিম তীর ও জর্ডান উপত্যকাকে ইসরায়েলের সঙ্গে একীভূত করার একটি প্রস্তাব গতকাল পাস হয়েছে। এতে করে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচ্যসূচিতে...

থাইল্যান্ডের এফ–১৬ হামলায় কম্বোডিয়ায় উত্তেজনা

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে পুরোনো সীমান্ত দ্বন্দ্ব নতুন করে ভয়াবহ সংঘাতে রূপ নিয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হওয়া সংঘাতে...

Related Articles

ভয়াবহ রূপ নিয়েছে থাই-কম্বোডিয়া সীমান্ত সংঘাত, বাস্তুচ্যুত পৌনে দুই লাখ

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যকার শতবর্ষী সীমান্ত বিরোধ কেন্দ্র করে শুরু হওয়া সংঘাত...

শেখ হাসিনার বিষয়ে ভারতের নীতি পরিবর্তনের ইঙ্গিত

নয়া দিল্লি থেকে পাওয়া একাধিক কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী...

গাজায় প্রতি তিনজনের একজন দিন কাটায় না খেয়ে

গাজা উপত্যকায় খাদ্য সংকট ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)...

লন্ডনের বাসে কিশোর খুন: দুই তরুণের ১৫ বছরের সাজা

লন্ডনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ওলউইচে চলন্ত বাসে ১৪ বছর বয়সী কেলিয়ান বোকাশাকে পরিকল্পিতভাবে কুপিয়ে...