রাজধানীর উত্তরায় যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে আহত চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী তাসনিম আফরোজ আইমান (১০) পাঁচ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে অবশেষে শুক্রবার সকালে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে মারা গেছে। শিশুটির দেহের ৪৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। তার মৃত্যুর পর স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের বাতাস।
তাসনিম মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ছিল। সোমবার সকালে স্কুল চলাকালে উত্তরায় একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হলে তার ধ্বংসাবশেষে দগ্ধ হয় তাসনিম। দগ্ধ অবস্থায় শিক্ষকের মোবাইল থেকে ফোন করে সে দুর্ঘটনার কথা জানায় দাদি রুমা বেগমকে। খবর পেয়ে তড়িঘড়ি করে স্কুলে ছুটে যান বাবা ইসমাইল হোসেন ও মা আয়েশা আক্তার। পরে মেয়েকে ভর্তি করা হয় জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে।
তাসনিমের বাবা ইসমাইল হোসেন একজন আমদানি-রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী। তিনি সকালে মেয়েকে স্কুলে দিয়ে কাজে যান। তাসনিমের মৃত্যুর খবর পেয়ে পাড়ায় নেমে আসে শোকের ছায়া। শুক্রবার সন্ধ্যায় তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনেরা। তাসনিমের বাবা বলেন, “আমার বুকের মানিককে কীভাবে কবরে রেখে যাব? আমি কাকে স্কুলে নিয়ে যাব? ছুটির দিনে কাকে নিয়ে ঘুরতে যাব?”
স্বজনেরা জানান, তাসনিমের মরদেহ প্রথমে ঢাকার উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরের বাসায় নেওয়া হয়, সেখানে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম জানাজা। এরপর মরদেহ আনা হয় তার গ্রামের বাড়ি নারায়ণপুরে। বাদ এশা দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
তাসনিমের নানা নিজামুদ্দিন জানান, মাসের শুরুতে নাতনি মামার সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল। সে বলেছিল, পরেরবার হেলিকপ্টারে করে আসবে। সেই ইচ্ছা পূরণ না হলেও সে ফিরেছে নিথর দেহে—লাশবাহী গাড়িতে।
উত্তরার বিমান দুর্ঘটনার তদন্ত এখনো চলছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনে বিস্তারিত অনুসন্ধান করা হচ্ছে। তবে এরই মধ্যে এক প্রাণহানির ঘটনা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও সাধারণ মানুষের মনে গভীর প্রশ্ন ও কষ্টের জন্ম দিয়েছে।
Leave a comment