Home আন্তর্জাতিক মিশরের প্রেসিডেন্ট সিসির চাপে ইসরায়েলবিরোধী বিবৃতি প্রত্যাহার করল আল–আজহারের ইমাম
আন্তর্জাতিক

মিশরের প্রেসিডেন্ট সিসির চাপে ইসরায়েলবিরোধী বিবৃতি প্রত্যাহার করল আল–আজহারের ইমাম

Share
Share

গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান মানবিক বিপর্যয়কে ‘গণহত্যার উদ্দেশ্যে অনাহার’ বলে অভিহিত করে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এক কঠোর বিবৃতি দিয়েছিল মিসরের ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আল–আজহার। কিন্তু সেই বিবৃতি প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেটি সরিয়ে ফেলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ—আর এর পেছনে প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল–সিসির কার্যালয় থেকে আসা চাপ কাজ করেছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম মিডল ইস্ট আই

বিবৃতিতে আল–আজহার সরাসরি ইসরায়েলকে দোষারোপ করে বলেছিল, গাজায় অনাহার চাপিয়ে দিয়ে তারা পরিকল্পিত গণহত্যা চালাচ্ছে। এই বক্তব্যের জন্যই প্রেসিডেন্ট কার্যালয় থেকে আল–আজহারের গ্র্যান্ড ইমাম শেখ আহমদ আল–তায়েবকে চাপ দেওয়া হয় এবং তিনি বিবৃতিটি প্রত্যাহারে সম্মত হন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরে দাবি করে, যুদ্ধবিরতি আলোচনায় প্রভাব ফেলতে পারে—এই আশঙ্কায় তারা নিজ উদ্যোগে বিবৃতিটি সরিয়ে নেয়।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি শুধু রাজনৈতিক চাপ নয়, বরং ধর্মীয় ও মানবিক বিবেকের কণ্ঠরোধের একটি মারাত্মক উদাহরণ। ইসলামী সংগঠন ‘ইন্টারন্যাশনাল মুসলিম স্কলার্স ইউনিয়ন’–এর প্রধান আলি আল–কারদাগি এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তাঁর ভাষায়, “এই নীরবতা আর সহমতির সময়ে বিবেক ও ধর্মীয় অবস্থানকে ধ্বংস করার জন্যই এই চাপ।”

প্রেসিডেন্ট সিসির সরকার এমন সময় আল–আজহারকে নীরব থাকতে বাধ্য করল, যখন গাজায় খাদ্য সংকটে শিশুরা অপুষ্টিতে মারা যাচ্ছে। শুধু মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত অপুষ্টিতে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১১৫ জন ফিলিস্তিনির, যাদের মধ্যে ৮০ জনই শিশু। জাতিসংঘের হিসাব বলছে, গাজার ২১ লাখ মানুষ এখন দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে।

মিসরের ভূমিকা নিয়েও আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনা বাড়ছে। গাজা সীমান্তে ত্রাণ প্রবেশের পথ বন্ধ করে রাখার কারণে নেদারল্যান্ডসে মিসরের দূতাবাস ঘিরে বিক্ষোভ করেছেন অধিকারকর্মীরা। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, হেগ শহরে মিসরীয় দূতাবাসে শিকল দিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন একাধিক কর্মী। তাঁরা সিসিকে “নিষ্ঠুর ও প্রতারক” হিসেবে আখ্যা দেন।

আল–আজহারের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান, যা দীর্ঘদিন ধরে মুসলিম বিশ্বের নৈতিক দিকনির্দেশক হিসেবে বিবেচিত, সেটিকে এভাবে রাষ্ট্রীয় চাপে চুপ করিয়ে দেওয়া শুধু মিসরের নয়, বরং গোটা মুসলিম বিশ্বেই এক গভীর বার্তা বহন করে—বিবেকের চেয়ে রাষ্ট্রীয় বাধ্যবাধকতা বড় হয়ে উঠছে।

সূত্র: মিডল ইস্ট আই

 

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

সাইকেল র‍্যালির মাধ্যমে শিবিরের তিন দিনব্যাপী কর্মসূচির সূচনা

ফ্যাসিবাদের পতনের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা তিন দিনব্যাপী কর্মসূচির সূচনা করেছে। এই কর্মসূচির প্রথম দিনটি শুরু হয় একটি সাইকেল...

পুরোনো বিমানবন্দরে ‘এয়ার শো’ দেখতে মানুষের ঢল

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ঢাকার তেজগাঁওয়ের পুরোনো বিমানবন্দরে আয়োজিত বিশেষ ‘এয়ার শো’ দেখতে মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই মানুষের ঢল নেমেছে। উৎসবমুখর পরিবেশে...

Related Articles

সিলেটে তরুণদের বিদেশমুখিতা বাড়ছে, কারণ ….

সিলেটকে বলা হয় ‘দ্বিতীয় লন্ডন’। যুক্তরাজ্যে সিলেটি প্রবাসীদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতির কারণে এই...

রাশিয়ার রোস্তভে ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলা: নিহত ৩

রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় রোস্তভ অঞ্চলে রাতভর চালানো ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলায় অন্তত তিনজন নিহত...

ওবায়দুল কাদের ও সাদ্দামসহ ৭ শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি

জুলাই–আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান দমনে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আওয়ামী...

ভারী বৃষ্টিতে রক্তিম রঙে ঢেকে গেল ইরানের হরমুজ দ্বীপের সমুদ্র

ইরানের পারস্য উপসাগরে অবস্থিত হরমুজ দ্বীপে ভারী বৃষ্টির পর স্থানীয় বাসিন্দা ও...