গাজায় এখন ক্ষুধাও হয়ে উঠেছে গণহত্যার অস্ত্র। ইসরায়েলি হামলার পাশাপাশি অনাহারে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে শিশুসহ অসংখ্য ফিলিস্তিনি। গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বোমা ও ক্ষুধা মিলে প্রাণ নিয়েছে অন্তত ১০০ জনের। এর মধ্যে ৩৪ জন নিহত হয়েছেন খাদ্য সহায়তা নিতে গিয়ে, বাকিরা হামলা ও অপুষ্টিতে মারা গেছেন।
আল–জাজিরার রিপোর্ট অনুযায়ী, খাদ্য সংকটে আজ আরও অন্তত ১০ জন মারা গেছেন, যাঁদের বেশিরভাগই শিশু। এ নিয়ে গত কয়েক মাসে গাজায় অপুষ্টি ও অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১১ জনে। জাতিসংঘের সংস্থা ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, মৃতদের মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর সংখ্যা ২১।
গাজার মধ্যাঞ্চল দেইর আল-বালাহ থেকে আল–জাজিরার প্রতিনিধি তারেক আবু আজ্জুম জানাচ্ছেন, “ক্ষুধা এখন বোমার মতোই প্রাণঘাতী। পরিবারগুলো আর খাবার চাইছে না—তারা শুধু কিছু একটা চাইছে বাঁচার জন্য।”
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হিসাব বলছে, গাজার বাইরে গুদামে পড়ে আছে টনকে টন খাবার, পানি, ওষুধ। কিন্তু গাজায় ঢোকার অনুমতি পাচ্ছে না ত্রাণ সংস্থাগুলো। ইসরায়েলি সেনারা মার্চ থেকে গাজায় পণ্য ঢোকা বন্ধ রেখেছে। মে মাস থেকে সীমিত আকারে ত্রাণ ঢুকছে, যার বেশিরভাগ বিতরণ করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল–সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)। বিতরণ কার্যক্রমের পারদর্শিতা নিয়ে বিতর্ক তীব্র, বিশেষত কারণ জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্রগুলোর আশপাশে ইসরায়েলি বাহিনী গুলি চালিয়ে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে নিয়মিত।
জাতিসংঘ বলছে, খাদ্য সংকট এতটাই ভয়াবহ যে সাংবাদিক, শিক্ষক, এমনকি স্বাস্থ্যকর্মীরাও ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না। ডব্লিউএইচওর প্রতিনিধি রিক পিপারকর্ন বলেছেন, “গাজার হাসপাতালগুলো এখন বিশাল ট্রমা ওয়ার্ডে পরিণত হয়েছে।”
আল-শিফা হাসপাতালের চিকিৎসক নূর শরাফ জানান, “মানুষ দিনের পর দিন না খেয়ে থাকছে। এখন তারা কেবল অনাহারে মরছে। আমরাও খাবার পাই না, তবু সেবা দিয়ে যাচ্ছি।”
এই দুর্ভিক্ষ একবারে আকস্মিক নয়। এটি পরিকল্পিত, চাপিয়ে দেওয়া এক মানবিক বিপর্যয়—যেখানে ক্ষুধা এবং বোমা একসঙ্গে কাজ করছে একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করতে।
Leave a comment