ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটে অধিকৃত পশ্চিম তীর ও জর্ডান উপত্যকাকে ইসরায়েলের সঙ্গে একীভূত করার একটি প্রস্তাব গতকাল পাস হয়েছে। এতে করে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচ্যসূচিতে যুক্ত হয়েছে। প্রস্তাবে সরাসরি উল্লেখ করা হয়েছে যে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ধারণা আর নেসেটের আলোচনার অংশ নয়। এটি এখন থেকে তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডার বাইরে।
প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট পড়েছে ৭১ জনের, আর বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন মাত্র ১৩ জন। কাহোল লাভান ও ইয়েশ আতিদ পার্টি ভোটদানে বিরত থেকেছে। যদিও প্রস্তাবটি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক নয়, তারপরও এটি নেসেটের অবস্থান স্পষ্ট করে—ইসরায়েল এখন প্রকাশ্যে পশ্চিম তীরকে নিজেদের “ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক মাতৃভূমি” বলে দাবি করছে। প্রস্তাবে এমনকি হেবরন, নাবলুস, শিলোহ ও বাইত এলের মতো বিতর্কিত ও ফিলিস্তিনি অধ্যুষিত এলাকাকেও ইহুদি ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই প্রস্তাব এমন এক সময়ে এসেছে, যখন গাজায় যুদ্ধ চলছে এবং পশ্চিম তীরে সহিংসতা তীব্র হচ্ছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনা ও অবৈধ বসতিস্থাপনকারীদের হাতে নিহত হয়েছেন প্রায় এক হাজার ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন সাত হাজারের বেশি।
১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর থেকেই ইসরায়েল পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজা উপত্যকা দখল করে রেখেছে। গাজা থেকে ২০০৫ সালে সেনা প্রত্যাহার করলেও, সেখানে ফের দখলদারির স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলছে। অন্যদিকে, জর্ডান উপত্যকা যা ফিলিস্তিনিদের জন্য কৃষিকাজ ও কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেটিও একই সময় থেকে ইসরায়েলের দখলে রয়েছে।
জাতিসংঘের নানান প্রতিবেদন ও আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের মত অনুযায়ী, এসব ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারি অবৈধ। আইসিজে গত জুলাইতে এক মতামতে বলেছে, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমের সব বসতি খালি করতে হবে। কিন্তু নেসেটের এই নতুন প্রস্তাব সেই আন্তর্জাতিক চাপকে স্পষ্টভাবে অগ্রাহ্য করছে।
ইসরায়েলের এ ধরনের অবস্থান মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে এবং বহু দশকের শান্তি আলোচনার ভিত্তিকে একরকম ধ্বংস করে দেবে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।
তথ্যসূত্র: মিডল ইস্ট মনিটর
Leave a comment