Home জাতীয় নিহতের সংখ্যা নিয়ে নতুন তথ্য দিলেন মাইলস্টোনের শিক্ষিকা পূর্ণিমা দাস
জাতীয়দুর্ঘটনা

নিহতের সংখ্যা নিয়ে নতুন তথ্য দিলেন মাইলস্টোনের শিক্ষিকা পূর্ণিমা দাস

Share
Share

রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা যাচাই-বাছাইয়ের মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে। এবার এসব নিয়ে স্কুলের আগুনে পুড়ে যাওয়া হায়দার আলী ভবনের শিক্ষকা পূর্ণিমা দাস মুখ খুলেছেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এই শিক্ষিকা নিজের ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘ভুল তথ্য ছড়াবেন না। আমিও আগুনের মধ্যে আটকা পড়েছিলাম। আমার চেয়ে বেশি ফেসবুকবাসী জানবেন না, তাই না?’

তিনি জানান, স্কুলের ক্লাস শেষ হয় দুপুর ১টায়। তার এক-দুই মিনিট পর তিনি স্কাই সেকশনে ঢুকে দেখেন, সেখানে কেবল একজন শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে ছিল। বাকি সবাই ক্লাস শেষ করে চলে গিয়েছিল। তবে কিছু বাচ্চা র অভিভাবক আসেনি বলে আবার স্কাই সেকশনে ফিরে আসলে আরেকজন টিচার ক্লাস থেকে তাদের নিয়ে অন্য সেকশনে বসায়।

পূর্ণিমা দাস আরো জানান, ‘তবুও কয়েকজন (পাঁচ-ছয়জন) বাচ্চা আবার স্কাই সেকশনে ঢুকেছিল। তাদেরই হারিয়ে ফেলেছি আমরা। কেউ হয়তো করিডোরে খেলছিল, কেউ সিঁড়িতে ছোটাছুটি করছিল।’তার ভাষ্য অনুযায়ী, স্কাই সেকশনের চেয়ে ক্লাউড সেকশন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।

ক্লাউড সেকশনে বাচ্চার সংখ্যা তুলনামূলক বেশি ছিল। সেখানে শিক্ষিকা মাহরীন চৌধুরী, মাসুকা ও মাহফুজা বাচ্চাদের বের করতে গিয়ে নিজেরাই দগ্ধ হন। প্রাণ হারান মাহরীন মিস ও মাসুকা মিস। গুরুতর আহত মাহফুজা মিস এখন লাইফ সাপোর্টে আছেন বলে পূর্ণিমা জানান। ক্লাউড সেকশনের পাশে থাকা ময়না সেকশনে কিছু শিক্ষার্থী আহত হলেও কেউ মারা যায়নি বলে জানান তিনি।

তবে ময়নার পাশে দোয়েল সেকশনের এক শিক্ষার্থী মারা গেছে। দোয়েলের পাশে টিউবরোজ ও ওয়াটারলিলি সেকশনের সব শিক্ষার্থী নিরাপদে রয়েছে।  দ্বিতীয় তলার দুটি শ্রেণিকক্ষ এবং একটি টিচার্স রুম পুড়ে গেছে বলে জানান তিনি। সেখানে ১০ থেকে ২০ জনের মতো শিক্ষার্থী ছিলেন।

এছাড়া, হায়দার আলী ভবনের সামনে, দোলনায় এবং করিডোরের হাঁটাহাঁটি করা বাচ্চার সংখ্যা অনুমান করা কঠিন বলে জানান তিনি। অনেকের শরীর পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ায় কিছু লাশ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন এই শিক্ষিকা।

সম্প্রতি কিছু সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী দাবি করছেন, নিহত শিক্ষার্থীদের লাশ ‘গুম’ করা হচ্ছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন পূর্ণিমা দাস। তিনি বলেন, ‘আমরা শিক্ষক, রাজনীতিবিদ নই। একটা বাচ্চাকে বাঁচাতে না পারলেও তার লাশ অন্তত বাবা-মায়ের কাছে পৌঁছে দিতে সর্বাত্মক চেষ্টা করব।’

তিনি আরো বলেন, ‘আপনাদের কোনো ধারণা নেই এই শিক্ষকরা কিভাবে বাচ্চাদের আগলে রাখে। প্রতিদিন ছুটির সময় মাহরীন মিস গেটের সামনে দাঁড়িয়ে অভিভাবকদের হাতে বুঝিয়ে দেন বাচ্চাদের। একটা বাচ্চাও না গেলে সরে দাঁড়ান না তিনি।’

গুজব না ছড়াতে অনুরোধ করে পূর্ণিমা দাস বলেন, ‘নিহতের সংখ্যা সামনে বাড়বে, আপনাদের বাড়াতে হবে না। আসুন, প্রতিটি ফুলের জন্য যারা অকালে ঝরে গেল— আমাদের শিক্ষক, স্টাফ আর ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের জন্য আমরা প্রার্থনা করি।’

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

হাসপাতাল এত দূরে কেন মা, আব্দুল্লাহ শামীমের বাঁচার আকুতি

মাত্র আট মাস আগে সৌদি আরবে কর্মরত অবস্থায় মারা যান জুলেখা বেগমের স্বামী আবুল কালাম মাঝি। ছেলেমেয়েদের বুকে ছড়িয়ে ধরে সেই শোক কাটিয়ে...

ঠাকুরগাঁওয়ে বজ্রপাতে প্রাণ গেল নৈশপ্রহরী সাঈদের

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে আবু সাঈদ (৫০) নামে এক নৈশপ্রহরীর। উপজেলার লেহেম্বা ইউনিয়নের গোগর গ্রামের অন্তার বিলের মাঠে বুধবার (২৩ জুলাই)...

Related Articles

উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনায় দগ্ধ আরো এক শিশুর মৃত্যু

রাজধানীর উত্তরায় যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে আহত চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী তাসনিম আফরোজ আইমান...

জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের চুক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত

বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্তকে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর...

হঠাৎ সিএনজির ধাক্কায় ট্রাকের নিচে প্রাণ গেল তিনজনের

চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কে ভয়াবহ এক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন মোটরসাইকেলের তিন আরোহী। আজ...

মোটরসাইকেল সংঘর্ষে আগুন ধরে তরুণ নিহত

নোয়াখালীর সেনবাগ-সোনাইমুড়ী সড়কে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষের পর একটিতে আগুন ধরে গিয়ে...