গাজার দক্ষিণাঞ্চলের রাফা শহরে ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর মরিচের গুঁড়া ছুড়েছেন ইসরায়েলি সেনারা। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত বিতর্কিত ত্রাণ সংস্থা জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে জড়ো হওয়া নারী, পুরুষ ও শিশুদের লক্ষ্য করে এই নিষ্ঠুরতা চালানো হয়।
ঘটনার ভিডিওটি গত ১০ জুলাই মোবাইল ফোনে ধারণ করা হলেও এটি শনিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পায় এবং দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেছে আল–জাজিরার ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা সানাদ। এতে দেখা যায়, ইসরায়েলি সেনারা মরিচের গুঁড়ার স্প্রে করে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করছেন। কেউ মুখ ঢেকে পালাচ্ছেন, কেউ আতঙ্কিত হয়ে শিশু কোলে নিয়ে ছুটছেন, কেউ বা পিঠে ময়দার বস্তা নিয়ে দিশেহারা হয়ে দৌড়াচ্ছেন।
জিএইচএফ গাজায় কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৮৯১ জন ফিলিস্তিনি খাদ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। জাতিসংঘের হিসাব বলছে, নিহতদের মধ্যে অন্তত ৬৭৪ জনই মারা গেছেন জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্রগুলোর আশপাশে সংঘটিত হামলায়।
মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে ইসরায়েলের কিছুটা অবরোধ শিথিলের পর গাজায় জিএইচএফের বিতরণ কার্যক্রম শুরু হলেও এটি কার্যত জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে চলা ত্রাণ নেটওয়ার্ককে উপেক্ষা করে পরিচালিত হচ্ছে। স্থানীয় অধিবাসীরা অভিযোগ করেছেন, এই ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রগুলোতে গেলেই গুলির ঝুঁকি নিতে হয়।
গাজাবাসী মাহমুদ মোকাইমার বলেন, “আমরা যখন ত্রাণ নিতে যাচ্ছিলাম, তখন ইসরায়েলি সেনারা প্রথমে সতর্কতামূলক গুলি চালায়। এরপর হঠাৎ করে সরাসরি গুলিবর্ষণ শুরু হয়।” তিনি জানান, নিজের চোখে তিনি অন্তত তিনজনের নিথর দেহ মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেছেন এবং বহু আহত মানুষকে ছুটে পালাতে দেখেছেন।
গত রোববার এক দিনে ইসরায়েলি হামলায় আরও ৮৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৭৩ জনই ছিলেন ত্রাণ সংগ্রহের জন্য জড়ো হওয়া সাধারণ মানুষ।
এদিকে গাজার হাসপাতালগুলোতেও চরম মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। আল-আকসা মারটায়ার হাসপাতালের সূত্র জানায়, রাজান আবু জাহের নামের চার বছর বয়সী এক শিশু অপুষ্টি ও অনাহারে মারা গেছে। আল-শিফা হাসপাতাল জানিয়েছে, সেখানে ৩৫ দিন বয়সী এক নবজাতকও অনাহারে প্রাণ হারিয়েছে।
আল–জাজিরার প্রতিবেদক হিন্দ খোদারি বলেন, “মা–বাবারা জানেন, ত্রাণকেন্দ্রে গেলে মারা পড়তে পারেন। তবুও তারা যান, কারণ না গেলে তাঁদের সন্তানদের না খেয়ে থাকতে হয়। বাজারে কিছুই কেনার মতো অবস্থা নেই।”
গাজায় এই নিষ্ঠুর পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মানবিক সহানুভূতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে মরিচের গুঁড়া ছোড়া একটি জাতির অন্তর্জগতের চিত্র ফুটিয়ে তোলে—যেখানে মানবতা ক্রমেই বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
Leave a comment