নারায়ণগঞ্জের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শুক্রবার অনুষ্ঠিত গণসংহতি আন্দোলনের এক সমাবেশে দলটির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, “জুলাই আমাদের স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে—এই দেশে ঘৃণার রাজনীতি আর চলবে না।” ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষায় রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের লক্ষ্যে’ আয়োজিত এই সমাবেশে তিনি দেশের বর্তমান ক্ষমতাকাঠামো ও রাজনীতির প্রকৃতি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন।
জোনায়েদ সাকি বলেন, “জুলাই মাসের শহীদরা সারা দেশের মানুষকে এক সুতায় গেঁথে দিয়েছিলেন। আবু সাঈদের বুকের গুলিই জ্বালিয়ে দিয়েছিল সেই দাবানল, যা জনগণের মধ্যে জেগে তোলে অধিকার সচেতনতা ও পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা। আমরা যদি সেই দাবানলকে হৃদয়ে ধারণ করি, তাহলে আগামী বাংলাদেশ হবে জনগণের—শোষণের নয়, দমন-পীড়নের নয়।”
সমাবেশে তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে আজ ক্ষমতা ব্যবহৃত হচ্ছে ধনসম্পদ আহরণের হাতিয়ার হিসেবে। রাজনীতি পরিণত হয়েছে লুটপাটের চুক্তিতে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে রাষ্ট্রের ক্ষমতাকাঠামোকে বদলাতে হবে। আমাদের প্রয়োজন নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত, যেখানে জনগণের সম্মান ও মর্যাদা নিশ্চিত হবে। জুলাই আমাদের সেই পথ দেখায়।”
তিনি বলেন, “এখনকার রাজনীতি যে ঘৃণা, বিভাজন আর প্রতিহিংসার ভিত্তিতে চলে, তা থেকে বেরিয়ে আসার সময় এখনই। ঘৃণার রাজনীতি আর চলবে না—এটাই জুলাইয়ের সবচেয়ে বড় শিক্ষা। এই শিক্ষা গ্রহণ করে আমাদের সামনে এগোতে হবে।”
গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সমন্বয়কারী তরিকুল সুজনের সভাপতিত্বে এবং নির্বাহী সমন্বয়কারী অঞ্জন দাসের সঞ্চালনায় আয়োজিত এই সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন সংগঠনের মহানগর কমিটির সমন্বয়কারী বিপ্লব খান, নির্বাহী সমন্বয়কারী পপি রানী সরকার, জেলা কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী আলমগীর হোসেন আলম, প্রচার সম্পাদক শুভ দেব, এবং বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি ফারহানা মুনা।
সমাবেশের আগে নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রধান সড়ক বিবি রোড ধরে ৫৬ শহীদের প্রতিকৃতি বহন করে একটি শহীদি মার্চ অনুষ্ঠিত হয়। অংশগ্রহণকারীরা পতাকা ও প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে ‘ঘৃণার রাজনীতি রুখে দাও’, ‘জনগণের সরকার চাই’ স্লোগানে মুখর করে তোলে গোটা শহর। এই কর্মসূচি রূপ নেয় এক ধরনের প্রতীকী প্রতিরোধ-প্রদর্শনে।
এ ধরনের সমাবেশগুলোতে গণসংহতি আন্দোলনের উপস্থিতি এবং বক্তব্য ক্রমেই স্পষ্ট করে দিচ্ছে—তারা রাজনীতির মূলধারায় নিজস্ব অবস্থান সুদৃঢ় করতে চাইছে একটি বিকল্প গণতান্ত্রিক কাঠামোর প্রস্তাবনা দিয়ে, যেখানে জনগণ হবে রাজনীতির কেন্দ্রে। তবে তাদের এই বার্তা কতটা প্রভাব ফেলবে বৃহত্তর রাজনীতিতে, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
Leave a comment