বগুড়ায় এক হৃদয়বিদারক ঘটনায় খুন হওয়ার আগমুহূর্তে শ্বশুরকে ফোন করে বাড়িতে আসতে বলেছিলেন ২০ বছর বয়সী গৃহবধূ উম্মে হাবিবা। কিন্তু সেই আহ্বান শেষ পর্যন্ত বাঁচাতে পারেনি তাঁকে কিংবা তাঁর শাশুড়ি লাইলী বেওয়াকে। ফোনের অপর প্রান্তে থাকা শ্বশুর বুলবুল আহম্মেদ শুধু শুনেছেন চিৎকার, কান্না আর আতঙ্কময় আর্তনাদ। এরপর বাড়িতে ফিরে পেয়েছেন স্তব্ধ দুটো লাশ আর জখম হওয়া নিজের মেয়েকে।
এই নির্মম ঘটনা ঘটেছে বুধবার রাতে, বগুড়া শহরের ইসলামপুর হরিগাড়ি পশ্চিমপাড়া এলাকায়। স্থানীয়রা জানান, সৈকত আহমেদ (১৮) নামের এক বখাটে কিশোরী মেয়েটিকে দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। মেয়েটির প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় সে ক্ষিপ্ত হয়ে ছুরি হাতে ঢুকে পড়ে মেয়েটির বাড়িতে। জোরপূর্বক তাকে তুলে নিতে গেলে বাধা দেন তার দাদি লাইলী বেওয়া ও ভাবি হাবিবা। একপর্যায়ে তিনজনকেই ছুরিকাঘাত করে সৈকত।
হাবিবার শ্বশুর বুলবুল আহম্মেদ প্রামাণিক তখন পাশের মহল্লার নিজ মুদি দোকানে ছিলেন। রাত ৮টা ৩৮ মিনিটে হাবিবার ফোন আসে। কণ্ঠে তীব্র উদ্বেগ নিয়ে তিনি বলেন, “হ্যালো আব্বু, বাড়িত আসেন তো।” উত্তরে তিনি জানতে চান, “ক্যা?” এরপরই ফোনে ভেসে আসে অস্ফুট চিৎকার ও কান্নার শব্দ, যা তাঁর জীবনকে পাল্টে দেয়।
বুলবুল ছুটে গিয়ে দেখেন, লাইলী বেওয়া ও হাবিবার রক্তাক্ত মরদেহ এবং স্কুলপড়ুয়া মেয়েটি জখম হয়ে কাতরাচ্ছে। ঠিক সেই মুহূর্তেই তিনি দেখেন রক্তমাখা ছুরি হাতে সৈকত পালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশের দাবি, সৈকতের বিরুদ্ধে আগেও নারী উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ ছিল এবং সে একজন মাদকাসক্ত বখাটে।
পুলিশের হেফাজতে থাকা সৈকতের বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। এদিকে নিহতদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে এবং আহত কিশোরী এখনও শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতাল সূত্র জানায়, তাঁর অবস্থা এখনও সংকটাপন্ন।
এই ঘটনা শুধু একটি পরিবারের শান্তি কেড়ে নেয়নি, বরং গোটা এলাকায় এক ভয়াবহ বার্তা দিয়ে গেছে যে, নারীর নিরাপত্তা প্রশ্নে সমাজ এখনও কতটা অসহায়। হাবিবার সেই শেষ ফোনকল যেন কেবল একজন শ্বশুরকে নয়, গোটা সমাজবিধানকেই জাগিয়ে তোলার আর্তি হয়ে রইল।
Leave a comment