কুমিল্লার তিতাস উপজেলায় সড়কের পাশ থেকে উদ্ধার হওয়া এক তরুণের গলাকাটা লাশের রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। নিহত তরুণের নাম ইমতিয়াজ হাওলাদার, বয়স ২২ বছর। তিনি বরিশালের কাজীরহাট থানার রতনপুর (চিলমারি) গ্রামের মো. দুলাল হাওলাদারের ছেলে। ১২ জুলাই জিয়ারকান্দি গুলবাগ এলাকায় হোমনা-গৌরীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে তাঁর লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত থাকায় পুলিশ প্রথম থেকেই এটি হত্যাকাণ্ড হিসেবে ধরে নিয়ে তদন্ত শুরু করে।
ঘটনার পরদিন, ১৩ জুলাই নিহত ইমতিয়াজের বাবা অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে তিতাস থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকে ছায়াতদন্তে নামে কুমিল্লা জেলা পিবিআই। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর ও শেরেবাংলা নগর এলাকা থেকে মঙ্গলবার রাতে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁরা হলেন বরিশালের এক বাসিন্দা, তাঁর ছেলে এবং তাঁর শ্যালক। পুলিশের দাবি, এই তিনজন পরিকল্পিতভাবে ইমতিয়াজকে খুনে জড়িত এবং তাঁরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার কুমিল্লার পিবিআই কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারওয়ার আলম বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের স্বীকারোক্তি ও প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী হত্যার মূল কারণ ছিল পারিবারিক সম্পর্কঘটিত বিষয়। প্রধান অভিযুক্ত ব্যক্তি ঢাকায় গাড়িচালকের কাজ করতেন। তাঁর স্ত্রী ও সন্তানরা বরিশালে অবস্থান করতেন। পুলিশ জানায়, দীর্ঘদিন ধরে ইমতিয়াজের সঙ্গে অভিযুক্তের স্ত্রীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। পরে সেই সম্পর্ক ছিন্ন করে ইমতিয়াজ অভিযুক্ত ব্যক্তির মেয়ের সঙ্গেও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। বিষয়টি জানার পর ক্ষুব্ধ হয়ে ওই ব্যক্তি হত্যার পরিকল্পনা করেন এবং ছেলে ও শ্যালককে সঙ্গে নিয়ে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন।
তদন্তে আরও জানা যায়, ১০ জুলাই ইমতিয়াজকে ঢাকায় ডেকে আনা হয়। ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে তাঁকে পুরোনো একটি মেরুন রঙের নোয়া গাড়িতে তোলা হয় এবং পরে কুমিল্লার তিতাস এলাকায় নিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয়। গাড়িটির ড্রয়ার থেকে ভুক্তভোগীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে, যা হত্যার পর অপরাধ ঢাকতে গাড়ির ভেতরেই রাখা হয়েছিল বলে জানায় পুলিশ।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনের সময় পিবিআই কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন নিহত ইমতিয়াজের বাবা দুলাল হাওলাদার। তিনি বলেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যক্তির স্ত্রীর কোনো অবৈধ সম্পর্ক ছিল না। তবে তাঁর ছেলে অভিযুক্তের মেয়েকে ভালোবাসতেন এবং তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল, যা হয়তো পরিবার মেনে নেয়নি। তিনি ছেলের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।
পিবিআই জানায়, মামলাটি এখন তদন্তাধীন এবং জব্দ করা আলামতের ফরেনসিক বিশ্লেষণ শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।
Leave a comment