বাংলাদেশে ২০২৪ সালের ঐতিহাসিক কোটা সংস্কার আন্দোলনের এক স্মরণীয় নাম শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। আজ তাঁর প্রথম শাহাদাৎ বার্ষিকী। গত বছরের এই দিনে ঢাকার আজমপুরে আন্দোলনের সময় শান্তিপূর্ণভাবে খাবার পানি ও বিস্কুট বিতরণ করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগ থেকে পাস করা ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী মুগ্ধ। মৃত্যুকালে তাঁর গলায় রক্তমাখা বিইউপির আইডি কার্ড ছিল, যা পরিণত হয় আন্দোলনের এক প্রতীকী চিত্রে।
মুগ্ধর শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে আজ উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের বামনারটেক কবরস্থানে তাঁর কবর জিয়ারত করেন পরিবার, বন্ধু এবং আন্দোলনের সহযোদ্ধারা। ঢাকায় বিভিন্ন স্থানে মুগ্ধকে স্মরণ করে আয়োজিত হয়েছে মিলাদ, দোয়া মাহফিল, এবং আলোকচিত্র প্রদর্শনী।
মুগ্ধ ছিলেন একজন প্রতিভাবান তরুণ। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম ফাইভারে ১ হাজারের বেশি সফল প্রজেক্ট সম্পন্ন করেন। বিশেষ করে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন ও সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ে তাঁর দক্ষতা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও প্রশংসিত হয়। গত বছর ফাইভার তাঁর মৃত্যুর পর এক ভেরিফায়েড শোকবার্তায় তাঁকে ‘প্রতিভাবান মার্কেটার’ আখ্যা দেয়।
তাঁর মৃত্যুর ঘটনায় দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল শোক ও প্রতিবাদের ঢেউ। তার যমজ ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি আবেগঘন ভিডিও প্রকাশ করলে তা ভাইরাল হয়। আন্দোলনের সময় সহিংসতায় সরকারিভাবে ৮৫০ জনের মৃত্যুর কথা বলা হলেও, গণমাধ্যমসূত্রে সেই সংখ্যা ছিল ১,২৫০–এর বেশি। এর মধ্যে মুগ্ধের মৃত্যু আন্দোলনের অন্যতম স্মরণীয় ও বেদনাবিধুর অধ্যায় হিসেবে গণ্য হয়।
গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর মুগ্ধকে বন্ধু জাকিরুল ইসলাম রাজধানীর ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই রাতেই বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে তাঁর মৃত্যুর সংবাদ।
২০২৪ সালের শেষদিকে ঢাকার উত্তরায় অবস্থিত পূর্বতন বঙ্গবন্ধু মুক্তমঞ্চের নাম পরিবর্তন করে ‘মুগ্ধ মঞ্চ’ রাখা হয়, যা তাঁর স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রেখেছে। একই বছর মানিক মিয়া এভিনিউতে আয়োজিত একটি ড্রোন শোতেও তাঁর প্রতিকৃতি প্রদর্শন করা হয়, যা আন্দোলন ও প্রতিবাদের নতুন ধারায় এক অনন্য সংযোজন ছিল।
বাংলাদেশের ইতিহাসে শহীদ মুগ্ধ এক তরুণ স্বপ্নবাজের প্রতিচ্ছবি, যিনি শুধু রাজনীতির নয়, নৈতিক দায়িত্ববোধ ও মানবিকতার কারণে আন্দোলনে অংশ নিয়ে প্রাণ দিয়েছেন। আজ তাঁর প্রথম শাহাদাৎ বার্ষিকীতে তাঁর স্বপ্ন, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে গোটা জাতি।
Leave a comment